ডেঙ্গু রোগী বাড়ার ঘটনা সত্য নয়: শেখ সেলিম

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 22:38:12

দেশব্যাপী ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়া নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় সন্তুষ্ট সংসদীয় কমিটি। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে যেভাবে মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে সেটা সত্য নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেলে সংসদ ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পুরো দুই ঘণ্টাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ সেলিম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

শেখ সেলিম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বাড়ার ঘটনা সত্য নয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে যেকোনো জ্বর হলেই ডেঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসেছে বলা হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর।

বৈঠকে আলোচিত একটি ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি হাসপাতালে আটজন রোগী এসেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার মধ্যে মাত্র একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কিন্তু ওই আটজনকেই ডেঙ্গু জ্বর বানিয়ে দেওয়া হল। তাই সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানাব, যেটা সঠিক সেটা লিখুন। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবেন না। সরকারের কোনো গাফিলতি থাকলে তা তুলে ধরতে পারেন।’

শেখ সেলিম বলেন, ‘এডিস মশা মারার দায়িত্ব তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের না, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাঁয়িত্ব পড়ে যায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি দেখবাল করছে।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবা অব্যহত হয়েছে। আমরা সবদিকে অ্যাড্রেস করেছি। আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে। সপ্তাহ খানেরে মধ্যে পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

সভাপতি বলেন, ‘গোটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। আমরা তাদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে ডেঙ্গু জ্বর যাতে বিস্তার না করে সেটার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। এজন্য কিছু কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি মনিটর করবে। অবিলম্বে যাতে মশা মারার ওষুধ আমদানি হয় সেজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন, ‘বিদেশ সফর নিয়ে কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। উনি কেন গেছেন, সেটা আমাদের এখানের আলোচনার বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কোনো মন্ত্রী দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। উনি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সফরে গেছেন না কী জন্য গেছেন এটা উনার আর প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। আর বিদেশ সফরে গেলে অপরাধটাইবা কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল। ওই সময় একটি বিদেশ সফর ছিল, আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যাইনি আমার প্রতিমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলাম।’

গণমাধ্যরে প্রতি প্রশ্ন রেখে শেখ সেলিম বলেন, ‘বিশ্বের কোন দেশে আছে রোগীর রুমে গিয়ে লাইভ টেলিকাস্ট করে। এটাকে কী সাংবাদিকতা বলে? আমি নিজেও তো সাংবাদিকতা করেছি। স্বাধীনতা মানে আমি যা খুশি তাই করতে পারি না। এতে জনমনে আতঙ্ক হয়। ডেঙ্গু রোগ সনাক্তের কীটের কোনো সঙ্কট নেই। আরও কীট আসতেছে। এরদামও আরও কমে যাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সামনে কোরবানি আছে। কোরবানির কারণে যে বর্জ্যটা হবে সেটা সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন মিলে দ্রুত সরানোর পদক্ষেপ নেবে। ডেঙ্গু মশার লার্ভা যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা জনসেচেতনতার ওপর জোর দিয়েছি। আমার বাড়ি আমি পরিষ্কার করব। এই ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারি বলে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মহামারি কাকে বলে? দশমিক ৬ ভাগ মানুষ মারা গেলে মহামারি হয়। আমাদের এখানে ডেঙ্গুতে কত লোক মারা গেছে? প্রত্যেক দিন তো হার্ট অ্যাটাকে ৩৫০ জন মারা যাচ্ছে। তাহলে এটা কী মহামারি?’

বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ‘এখনো তো নতুন ওষুধ এসে পৌঁছেনি, স্প্রেও করা হয়নি। সিটি করপোরশেন জানিয়েছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ওষুধ চলে আসবে, তারপর উনারা ওটা স্প্রে করবে। এজন্য একটু সময় লাগবে।’

কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, ডা. মুরাদ হাসান, আ ফ ম রুহুল হক, মো. মনসুর রহমান এবং মো. আব্দুল আজিজ অংশ গ্রহণ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর