কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ

, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 03:27:56

ঢাকা: দুই-তিন ঘন্টা ধরে এক জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বাস! ভিতরে বসে অস্বস্থিতে ছটফট যাত্রীদের। রিক্সার যাত্রীর মনে পড়ে যাওয়ার অাতঙ্ক। কোমর সমান পানিতে সর্তকতার সঙ্গে পা ফেলছেন পথচারি।

জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির এ দৃশ্যটি কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১০- এর। সকালের কয়েক মিনিটের মুষলধারা বৃষ্টিতে 'কোমর জলের নদীতে' পরিণত হয়েছে এ এলাকা।

সামান্য বৃষ্টিতে অনাসৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয় এ এলাকায়। তার উপর মেট্রোরেলের কাজ চলায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাও হয়ে পড়েছে অকার্যকর। ফলে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও চলাচলকারী মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

সকাল ৯ টায় মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা তেঁতুলিয়া পরিবহন সাড়ে ১২টা অবধি কাজীপাড়া পার হতে পারে নি। যাত্রীদের কেউ জট খোলার অপেক্ষায় রয়েছেন কেউ ভ্যানে করে, অনেকেই হাঁটু জল মাড়িয়ে গন্তব্য স্থলে রওনা দিচ্ছেন। স্কুল শিক্ষার্থীদের পানিতে ভিজে পরিবহনের অভাবে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

মিরপুর-১০ থেকে যদি ফার্মগেট অাসতে হলে না চাইলেও তাকে পানি পার হতেই হবে। মিরপুর ১০, ১৩, ১২, কাজীপাড়া শেওড়া প্রতিটি এলাকাতে কোথাও হাঁটু পর্যন্ত, কোথাও কোমর পযর্ন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে রিক্সা যোগে তালতলা আসতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। তাও মাঝপথে এসে রিক্সা আর যেতে পারে না। ফলে কোমর পানিতে নেমে ভয়ে হাঁটতে হচ্ছে মানুষকে।

পুরো রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মোটরসাইকেল, বাস, প্রাইভেট কার ও রিকসা বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে চরম বিপদে পড়েছে এসব পরিবহনের চালকরা।

বর্ষাকাল না হলেও সারাদেশে প্রতিদিন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কোনো কোনো এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কালশী রোড, মনিপুরিপাড়ায় জলাবদ্ধতা বৃষ্টি থামার ৫-৬ ঘন্টায়ও পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা দেখা যায় না।

দীর্ঘ সময় পানিবন্দি থাকার কারণে এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কাজীপাড়ার বাসিন্দা মোনায়েম হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আর কত এমন পরিস্থিতি সহ্য করবো। আগে বৃষ্টি হলে পানি এক-দেড় ঘন্টায় পানি সরে যেত। গত কয়েকমাস ধরে পানি সরতে অনেক সময় লাগছে। খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। বর্ষা আসার আগেই যদি এমন পরিস্থিতিতে হয় বর্ষা আসলে কি হবে আমাদের?

মেট্রোরেলে কাজ আর জলাবদ্ধতার কারণে এ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা যায়। সাজেদুর নামে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি হলে এমন পরিস্থিতি এখন নিত্য ঘটনা। কিছু করার নাই, দেখার কেউ নাই। কাস্টমার এ এলাকার আর আসেন না। যানজট ও জলাবদ্ধতায় ব্যবসায় ভাটা পড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি আর কতদিন সহ্য করতে হবে আল্লাহ জানেন।

বৃষ্টি হলে নগরীতে জনসাধারণের যে দুর্ভোগ- তা দূর করার নানা রকম ফিরিস্তি দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার। জলাবদ্ধতার এই নগরীতে উল্টো উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, সুয়েজলাইন ঠিক করতে গিয়ে আরো বেশি আতঙ্ক আর দুর্ভোগে ফেলছে নগরবাসীকে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর