কালোবাজারিতে অর্ধেক টিকিট, চারগুণ দামে বিক্রি!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান ও তৌফিকুল ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 02:38:20

ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। গত দুই দিনে রাজধানী ছেড়েছেন লাখো মানুষ। বাস বা ট্রেনের ‘সোনার হরিণ’ টিকিট যারা পাননি তাদের জন্য নতুন করে টিকিট দিচ্ছে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো। তবে সেটা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে।

টিকিট প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে নিয়ে টিকিট ছাড়ছেন স্বয়ং বাস কাউন্টারের ম্যানেজাররা। তারা বলছেন, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে যে এক-দুইটা গাড়ি হাতে রেখে দিয়েছিলেন সেই গাড়িগুলোর টিকিট ছাড়ছেন এখন।

তবে কেন টিকিটের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে এক-দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না তারা।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/09/1565363891178.jpg
এদিকে মহাসড়ক আর রেলযাত্রায় দুর্ভোগ চরমে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় স্থির হয়ে বসে আছেন উভয় পথের যাত্রীরা। একদিকে মাঝ রাস্তায় বিকল ট্রেন, অন্যদিকে মহাসড়কে জ্যামের কারণে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাসগুলো।

এমন পরিস্থিতিতে কল্যাণপুর ও গাবতলীর কাউন্টারগুলোতে দেদারসে বাড়তি দামে টিকিট বিক্রি করছে কালোবাজারিরা।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ দিন রাত থেকে শুরু করে ১১ আগস্ট ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত ছেড়ে যাবে এমন প্রতিটি বাসে ৫ থেকে ১০টি করে সিট ফাঁকা আছে। সেই টিকিটগুলো এক থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে, অবৈধভাবে এ টিকিট দেওয়া যেন রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্যামলী এনআর, এস আর ট্রাভেলস, হানিফ, শাহ ফতেহ আলী ও ডিপজল পরিবহনে।

সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানা যায়, শ্যামলী এন আর পরিবহনের ঢাকা টু গাইবান্ধা বাসের টিকিট ম্যানেজার আতিকুর রহমান হিরুর কাছে বগুড়ার ১০টি টিকিট আছে। বিভিন্ন দিনের এই টিকিটের দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা হলেও, তিনি বিক্রি করছেন ১৫০০ টাকায়।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/09/1565363918733.jpg
হিরুর কাছে থেকে বগুড়ার একটি টিকিটের দাম ৫০০ টাকা দিয়ে নিতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে তার কাছে সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে হিরু বলেন, সবাই মিলে কষ্ট করে টিকিট রেখেছি। একটু বেশি দামে বিক্রি না করলে চলবে কীভাবে?

শ্যামলী এন আর পরিবহনের আরও বেশ কয়েকটি রুটের টিকিট ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে জানা যায় সবার কাছেই ১০টির মতো টিকিট আছে। তবে প্রত্যেকটা টিকিটের জন্য এক-দেড় হাজার টাকা বাড়তি নিচ্ছেন তারা।

শুধু শ্যামলী এনআর নয়, এ চিত্র দেখা গেছে উত্তরবঙ্গগামী আরও একাধিক পরিবহনের কাউন্টারে। গাবতলীতে বসেই জানা যায়, বগুড়াগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ম্যানেজার বাচ্চু খানের কাছে পুরো একটি বাসের ৪০টি সিট ফাঁকা আছে। বিশেষ ক্ষমতা বলে বাসটির একটি টিকিটও তিনি আগে বিক্রি করেননি।

শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে এ তথ্যের সত্যতা মেলে। শুক্রবার বিকেল থেকে ওই বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। টিকিট প্রতি ১০০০/ ১২০০ টাকা করে দাম বেশি রাখছেন বাচ্চু খান। ৩৫০ টাকার টিকিট তিনি বিক্রি করছেন ১৫০০ টাকায়।

জানতে চাইলে বাচ্চু খান বলেন, প্রত্যেকটি বাসে কিছু কিছু সিট ফাঁকা থাকে। প্রথম দিকে যাত্রীর অভাবে আমরা টিকিট ছাড়তে পারিনি। তবে এখন যারা আসছেন তাদের আমরা টিকিটগুলো দিয়ে দিচ্ছি।

দাম বাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাচ্চু বলেন, যেহেতু মানুষ টিকিটের অভাবে যেতে পারছে না তাই তারাই দাম বাড়িয়ে দিতে চায়। আমরা অবৈধভাবে বাড়তি দামে টিকিট বিক্রি করছি না।

গাবতলীতে বাস টার্মিনালের সার্বিক বিষয় তদারকি করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি, জরিমানাও করেছি। আমরা ইতিমধ্যে হানিফকে জরিমানা করেছি। র্যা বের অভিযান চলমান রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর