১০ ঘণ্টা দেরিতে যথাসময়ে ছাড়লো বাস!

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-30 18:06:18

১০ ঘণ্টা দেরিতে যথাসময়ে ছাড়লো হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভলবো বাস! শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কথা থাকলেও শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় বাসটি ছেড়েছে।

হানিফের যখন এই অবস্থা তখন আরও করুণ দশা আগমনী এক্সপ্রেসের। তাদের রাত সাড়ে ১০টার গাড়ি সকাল ৮টায় ঢাকায় এসেও পৌঁছায়নি। যাত্রীদের জানানো হয়েছে, সাভারের দিকে অবস্থান করছে এসি বাসটি। এলেই যাত্রীরা উঠে চটজলদি উঠে পড়তে পারবেন তাতে। শুধু হানিফ এন্টারপ্রাইজ বা আগমনী এক্সপ্রেস নয়, অন্যান্য পরিবহনের দশাও একই।

কোন কাউন্টারেই পা ফেলার জায়গা নেই। গিজ গিজ করছে অপেক্ষমান যাত্রী। কাউন্টারে জায়গা না পাওয়ার যাত্রীর ভিড় উপচে পড়ছে রাস্তার উপরে। সবারই চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। কারো কারো চোখ ঘুমে ঢুলু ঢুলু। চেয়ারে বসেই তাদের কেউ বার বার টলে পড়ছেন, কিছুটা সম্বিৎ ফিরলে সামলে নিচ্ছেন নিজেকে। নারী ও শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ!

বাস চালক সুজন মিয়া বলেন, কাল দুপুরে যে গাড়িগুলো বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে, সেই গাড়ি এখনও পথে পড়ে আছে। গাড়িগুলো রাত ১০টার আগেই ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল।

তীব্র যানজটে দীর্ঘ সময় রাস্তায় থেকে ক্লান্ত চালক-হেলপাররাও। অনেকের মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে পথেই। যে কারণে অনেক গাড়ির সঠিক অবস্থানও নিশ্চিত হতে পারছে না কাউন্টারগুলো। শুক্রবার রাতের গাড়ি রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে শনিবার সকালে। সকাল ও দুপুরের গাড়ির শিডিউল পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরেরগুলোর ভাগ্যে কী আছে কেউ বলতে পারছেন না।

সকালে ছেড়ে যাওয়া বাসের টিকিটের গায়ে লেখা ‘নৈশ কোচ’। কাউন্টার থেকেও ঘোষণা আসছে রংপুরের নৈশ কোচের যাত্রীদের আসন নিতে বলা হচ্ছে। একজন তো মজা করে বলে বসলেন, এখন দিনে চলছে নৈশ কোচ!

নৈশ শব্দ নিয়ে একটি কৌতুক চালু আছে কল্যাণপুর এলাকায় সাবেক এক সংসদ সদস্যকে নিয়ে। তিনি এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সেই সভায় এক ব্যক্তি সংসদ সদস্যের কাছে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তোলেন। পরে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ওই সংসদ সদস্য বলেন, আমি নয়শো বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারব না। তবে আপনারা যদি জমি দিতে পারেন তবে বেশকিছু বিদ্যালয় স্থাপন করে দেব।

নৈশ অথবা নয়শো বিদ্যালয় স্থাপন হয়েছিল কিনা জানা নেই। যেমন যাত্রীরা কেউ জানেন না দিনের আলোতে যাত্রা শুরু করা নৈশ কোচটি কখন রংপুরে গিয়ে পৌঁছাবে!

ঈদযাত্রায় প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীরা আপন মনে বিড় বিড় করেন। কর্তারা নানান আশ্বাস দেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সব মিলিয়ে যায়। সেই ভুলোমনা শেয়ালের মতো—রাতের খাবার পরে পেট মোটা হয়ে গেলে যার গর্তে ঢুকতে কষ্ট হতো। তাই তখন সিদ্ধান্ত নিত পরদিন বের হওয়ার সময় গর্তের মুখ প্রশস্ত করবে। কিন্তু সকালে অনায়াসে বের হওয়ার সময় বেমালুম ভুলে যেত রাতের কথা। আবার রাতে ফিরে আগের দিনের মতোই সিদ্ধান্ত। এভাবেই তার কাটতো বছরের পর বছর। আমাদের কর্তারা বড় বড় প্রকল্প দেখান। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় যেটা করা সম্ভব সেদিকে তাদের মনোযোগ আছে বলে অনুমিত হয় না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর