কাঁচা চামড়ার পাইকারি দামে লোকসানের শঙ্কা খুচরা ব্যবসায়ীদের

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 07:22:25

শত শত চামড়া বোঝাই পিকআপ, ছোট ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে রাজধানীর সড়ক জুড়ে। রাস্তায় চামড়ার স্তূপ, ফুটপাতে চামড়া স্তূপ। কাঁচা চামড়ার কটু গন্ধে যেন নিঃশ্বাস নেওয়াটাই দায়। শত শত শ্রমিক কাজ করছেণ চামড়াগুলো নিয়ে। সারাদিনের সংগ্রহ করা চামড়াগুলো থেকে কেউ ঝুলে থাকা মাংস ছাড়াতে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত ছেড়া, ফাটা চামড়াগুলোকে আলাদা করতে, কারো ব্যস্ততা চামড়া ট্রাকে তুলতে। বাতাসে ভেসে আসা কটুগন্ধে রাস্তার দু'পাশের বেশিরভাগ দোকানপাট, বাসাবাড়ির দরজা জানালা ছিল বন্ধ। এরই মধ্যেও চলছিল চামড়া কেনাবেচা।

রোববার (১২ আগস্ট) রাত ৯টায় এই চিত্র দেখা যায় পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রবেশের তিন রাস্তার মোড়ে। এখান থেকে চামড়াগুলো পাইকারি দরে ক্রয় করে সেগুলো আড়তদারের কাছে বিক্রি করা হচ্ছিল। বিক্রিত চামড়া কিনে নেওয়া হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ৎ পুরান ঢাকার পোস্তায়।

তবে কাঁচা চামড়ার দামে হতাশ খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিক ও আড়তদারেরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে রাখে, কিংবা বন্ধ রাখে। তাই কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। অনেকটা বাধ্য হয়েই চামড়া বিক্রি করতে হয় তখন। চামড়ার পাইকারি বিক্রিতে লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কা আছে তাদের মধ্যে।

এবারের ইদুল আজহায় গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় নির্ধারণ করা ছিল প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া সে দামে গরুর মালিকের থেকে চামড়া কেনেননি খুচরা ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মৌসুমি খুচরা ব্যবসায়ীরা ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার দাম দিচ্ছেন ২০০-৩০০ টাকারও কম। এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকায়। একেকটি খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়, ভেড়ার চামড়া ১৫ টাকায়। যেটি গত কয়েক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন। আর সেকারণে অনেকেই চামড়ার দাম না থাকায় সেটি মসজিদ কিংবা এতিমখানায় কাঁচা চামড়া দান করে দিয়েছেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সড়কে কথা হয় চামড়ার খুচরা ব্যবসায়ী কলিমুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া এখানে এনে স্তূপ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এই স্তূপ থেকে আড়ৎদার ও পাইকারেরা কাঁচা চামড়া কিনে আড়তে নিয়ে যায়। সেখানেই তারা লবণ লাগিয়ে চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে।'

মোহাম্মদ ফারুক নামের একজন ব্যবসায়ী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এবারে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বেশি, বড় গরুর চামড়া কম। চামড়ার দাম কম থাকায় তারা ভালো কোয়ালিটির চামড়াও ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে পারেননি। কিন্তু সেই চামড়া নিয়েও এবার বিপদে পড়তে হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বাড়ি বাড়ি ঘুরে আমি ১০০টা চামড়া কিনেছিলাম। সেই ১০০ চামড়ার দাম আড়তদারেরা ১৫ হাজার টাকা দাম বলে। এখানেই ৫ হাজার টাকা ক্যাশ ঘাটতি আছে।'

একই কথা জানালেন খুচরা ব্যবসায়ী মানিক। তার মতে, খুচরা ব্যবসায়ীদের থেকে ট্যানারি মালিকরা সরাসরি চামড়া কিনেন না। তাই বাধ্য হয়ে আড়ৎদারের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়। আর সে সুযোগে আড়ৎদার ও ট্যানারি মালিক সিন্ডিকেট করে খুচরা ব্যবসায়ীদের ঠকায়।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন আড়তদারেরা। পোস্তায় আহমদ অ্যান্ড কোং আড়তের মালিক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, 'বিগত তিন চার বছর ধরেই বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা কম। এবার সেটি আরও বেশি। তাই চামড়া ব্যবসাটাই হুমকির মুখে আছে। আমরা নিজেরা দাম না পেলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কীভাবে দাম দেব।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর