চলছে চামড়া কেটে লবণ লাগানো

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 12:48:33

লোক মুখে প্রবাদ আছে, 'চামড়া কেটে লবণ লাগিয়ে দেওয়া'। মানুষ উত্তেজনার বশে অনেকে প্রায়ই কথাটি বলে থাকেন। আর সেই লবণ লাগানোর কাজটি চলছিল পোস্তায় চামড়ার আড়তগুলোতে। তবে এই চামড়া মানুষের নয়; কুরবানির পশুর চামড়া। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ নানা প্রজাতির পশুর চামড়া নিয়ে দারুণ ব্যস্ততা এখন দেশের সবচে বড় কাঁচা চামড়ার আড়ৎ পুরান ঢাকার পোস্তায়।

রোববার (১২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় আড়তঘর ঘুরে জানা যায়, সারা রাত চলবে লবণ লাগিয়ে চামড়া পক্রিয়াজাত করণের কাজ।

দুপুর থেকে পোস্তামুখি সড়কে খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া এনে জড়ো করতে শুরু করেন। সন্ধ্যার আগেই রাস্তায় চামড়ার স্তূপ, ফুটপাতে চামড়া স্তূপে ভরে ওঠে। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের থেকে চামড়া কিনে সেগুলো নেওয়া হচ্ছিল পোস্তার আড়তগুলোতে।

কাঁচা চামড়াগুলোকে এনে প্রথমে একটা পরিষ্কার জায়গায় রাখা হয়। সেখানে পানি দিয়ে ধুয়ে চামড়ার ওপর লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। একটা চামড়ায় লবণ ছিটানো হলে তার উপর আরেকটা চামড়া দেওয়া হয়। এভাবে তিন থেকে চার ফুট উঁচু স্তূপ তৈরি করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, আড়ৎ ঘরগুলোর ভেতরে কোনো জানালা নেই। মেঝেতে রক্তের রংয়ে লাল হয়ে রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ। তার ওপর চামড়ার কটু গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসে। এরই মাঝে আড়ৎ ঘরগুলোতে শ্রমিকদের ভীষণ ব্যস্ততা। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা চামড়ায় লবণ দেওয়ার কাজ করছিল।

শ্রমিক আরিফ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়ার মেইন হচ্ছে লবণ। তাই বিকেল থেকে চলছিল লবণ দেওয়ার কাজ। এখনো শেষ হয়নি। সারা রাত এই কাজ চলবে।'

জানা গেছে, মাঝারি আকারের একটি গরুর কাচা চামড়ায় ৮ থেকে ৯ কেজি লবণ লাগে। এছাড়া আরও ২০ প্রকারের কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। সেগুলো দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৩ মাস, ছাগলের চামড়া ১৫ দিন, ভেড়ার চামড়া ৭ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এরপর এই লবণ দেওয়া চামড়াতেই আবার পচন ধরা শুরু হয়।

আহমদ অ্যান্ড কোং আড়তের মালিক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, 'কাঁচা অবস্থায় গরু জবাইয়ের ১০ ঘণ্টা, খাসির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যেই চামড়ায় লবণ দিতে হবে। অন্যথায় চামড়া পচবে। আবার লবণ দিয়েই যেমন চামড়া সংরক্ষণ করা হয় আবার মেয়াদ শেষ হলে এই লবণই চামড়া খায়। তখন পচন ধরে যায় চামড়াতে।'

চামড়ার গুণগত মান সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এবারের মাঝারি আকারের চামড়া বেশি। আপাত দৃষ্টিতে গুণগত মানও ভালো। এখন সেগুলো থেকে সিলেকশনের পর বোঝা যাবে আসলে কেমন চামড়া বের হল। কেননা এবারে দেশজুড়ে বন্যা হয়েছে। অনেক গরু বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। বন্যার পানি নানা পোকা, জীবাণু গরুর চামড়ার ক্ষতি করেছে।'

এদিকে চলতি বছর চামড়ার দাম নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে। চামড়ার দাম কম হওয়ার কারণে হিসেবে পোস্তার অনেক চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ট্যানারিতে দেয়া চামড়ার দাম এখনো পুরোপুরি পাননি। এতে এবছর চামড়া কেনায় আর্থিক সংকট আছে তাদের। তারপরেও তারা চামড়া কেনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কারণে অনেক সময় দেখা যায় ৮০০ টাকা দিয়ে চামড়া কেনার পর ট্যানারি মালিকদের কাছে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০০ টাকায়। কেননা চামড়ার পচন ধরে গেলে তখন আর দাম দেখার সুযোগ থাকে না। তখন লোকসান করে হলেও আড়ৎদারদের চামড়া ছেড়ে দিতে হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর