সারি সারি চামড়ার স্তূপ রাস্তার দুই পাশে। ট্রাকে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া নিয়ে আসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন ও এর পরের দুই দিন রাত-দিন কর্মব্যস্ততা। চামড়া সংগ্রহ ও লবণ ছিটিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে দম ফেলার সময় নেই আড়তদার এবং কর্মচারীদের। এ যেন ঈদের পর আরেক উৎসব।
দৃশ্যটি কয়েকবছর আগে কাঁচা চামড়া বেচা-কেনার অন্যতম ব্যস্ত স্থান রাজধানীর পোস্তা এলাকার। কিন্তু, এখন আর নেই সেই চিত্র পুরান ঢাকার পোস্তার। নেই কাঁচা চামড়া বেচাকেনা। নেই খুচরা বিক্রেতা ও আড়তদারদের চাঞ্চল্য। হাতে তেমন কোনো কাজ নেই বলে বসে বসে অবসর সময় পার করছেন কর্মচারীরা। কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আসলেও তা শত চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারছেন না।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর পোস্তা এলাকায় ঈদের দ্বিতীয় দিনের এ চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পোস্তা এলাকার প্রায় অধিকাংশ আড়তদারদের চামড়া কেনা বাদ দিয়ে অবসর সময় পাড় করছেন। তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্যতা নেই। আগ্রহও দেখা যায়নি চামড়া কেনার। ঘণ্টাখানেক পর পর একটি দু’টি রিকশা করে চামড়া আসলেও রিকশায় পড়ে থাকছে সে চামড়া। ফলে কোরবানির ঈদের পর যে কর্মব্যস্ত রূপ ছিল পোস্তার তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
পোস্তার চামড়ার আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের হাতে টাকা নেই। ট্যানারি মালিকরা তাদের গত বছরের পাওনা টাকা দেয়নি, এছাড়া এ বছর নতুন করে চামড়ার কেনার টাকাও দেয়নি। ফলে তারা কাঁচা চামড়া কিনতে পারছেন না। তাই পোস্তায় কর্মব্যস্ততা নেই।
পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তদার মো.আসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গত ২০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত। কিন্তু দুই তিন বছর ধরে কোরবানির ঈদের পর পোস্তা এলাকার যে চিত্র তা আগে কখনও দেখিনি। কোনো ব্যবসায়ীর হাতে টাকা নেই। ট্যানারির মালিকরা টাকা দিচ্ছেন না। সরকারও আমাদের ব্যাংক লোন দেয়নি। তাহলে আমরা চামড়া কিভাবে কিনব।
পোস্তার আরেক আড়তদার মো.আলি আনসার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আজকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ টি চামড়া কিনেছি। অন্যান্য বার এ সময়ের মধ্যে ২০০ থেকে ২৫০ পিস চামড়া কেনা হয়ে যেত। হাতে টাকা নেই তাই চামড়া কেনা হচ্ছে না।
তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন আড়তদারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের জন্য পোস্তার চামড়া ব্যবসার আজ এ অবস্থা। তারা পানির মূল্যে চামড়া কেনার আশায় এই সিন্ডিকেটে করে রেখেছে।
হবিগঞ্জ থেকে ১৭০ টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মো.জিল্লুর রহমান। চামড়া কেনা থেকে শুরু করে পোস্তায় আসতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, একজন আড়তদারও চামড়ার দাম করছে না। আর যে দাম করছে সেই দামে বিক্রি করলে পুঁজিই থাকবে না। কিভাবে বিক্রি করি। পানির মূল্যে চামড়া কেনার জন্য আড়তদাররা এই সিন্ডিকেট করেছে।
কুমিল্লার হোমনা থেকে ১২০ টি চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মো.বিল্লাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলে, ৩০ বছর ধরে ঈদের সময় এলাকা থেকে চামড়া কিনে পোস্তায় নিয়ে আসি। কিন্তু এবারের মতো চিত্র আর কখনো দেখি নাই। আড়তদাররা ব্যবসাটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আর জীবনে কোনো দিন চামড়ার ব্যবসা করব না।
এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চামড়ার বাজার অস্থিতিশীল করছে পোস্তার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন আমাদের কাছে ২৫০ কোটি টাকা পায়, এটি একদমই সত্য নয়। তারা আমাদের কাছে ১৫০ কোটি টাকার মতো পাওনা আছেন। অধিকাংশ ট্যানারি মালিকই তাদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। কাঁচা চামড়ার বাজারটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে আমাদের কোন হাত নেই।