পোস্তায় পচা চামড়ার তীব্র গন্ধ

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 23:26:46

দাম নেই, তাই চামড়ার কদরও নেই। পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে রয়েছে চামড়া। গত তিনদিনে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পচন ধরেছে চামড়ায়। যানবাহন ও মানুষের পায়ে পায়ে পড়ে থাকা চামড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে এদিক সেদিক। বাতাসে পচা চমড়ার তীব্র গন্ধ।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায় দেশের কাঁচা চামড়া কেনা-বেচার আড়ত পুরান ঢাকার পোস্তায়। এবার যেন পচা চামড়ায় পচছে পোস্তা। যার মূল কারণ চামড়া বাজারে নজিরবিহীন দরপতন।

প্রতিবছর কোরবানি ঈদের পর সারা দেশ থেকে কাঁচা চামড়া আসে এই পোস্তায়। ট্রাকে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া নিয়ে পোস্তার রাস্তার দুই পাশে সারি সারি স্তূপ করে রাখেন মৌসুমি ব্যবসয়ী ও ফড়িয়ারা। স্তুপ থেকে কিনে আড়তে চামড়ায় লবণ দিয়ে মজুদ শুরু করা হয়।

ঐ সময় শ্রমিকদের ব্যস্ততা বাড়ে আড়তগুলোতে। চামড়া সংগ্রহ ও লবণ ছিটিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণে তখন দম ফেলার সময় থাকে না আড়তদার এবং কর্মচারীদের। ঈদের পর আরেক উৎসব লেগে থাকত পোস্তা এলাকায়।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই উৎসবে ভাটার স্রোত ছিল, এবার ভাটাও নেই; নিস্তরঙ্গ। ঈদের দিন রাতে ট্রাকের সারি পোস্তা অভিমুখে দেখা গেলেও মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মুখ ছিল মলিন। যে কাঁচা চামড়া তারা কিনেছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, সেই চামড়ার দাম আড়তদারের বলেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিছুক্ষণ পর কেনা দামও দিতে রাজি হয়নি। যে কারণে স্তুপকৃত চামড়া কেউ কেউ ফিরিয়ে নিয়ে যান, কেউবা বিক্রির আশায় ফেলে রাখেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোস্তা এলাকায় ২০০ থেকে ২৫০ আড়ত থাকলেও এই ঈদে অর্ধেকের মতো চালু ছিল। তার মধ্যে বেশিরভাগ আড়তদার গড়ে দুই থেকে তিন হাজার চামড়া ক্রয় করেছেন। অধিকাংশ চামড়াই অবিক্রীত থেকে গেছে।

সমীর এন্ড হানিফ কোং আড়তের স্বত্বাধিকারী সমীরউদ্দীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘এ বছর গরুর চামড়া নষ্ট হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে গড়ে ৬০ শতাংশ। ভেড়া আর মহিষের চামড়ার হিসাব নেই। যে পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়েছে তার আর্থিক মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা।’

চামড়া কিনতে না পারার কারণ হিসেবে অর্থ সংকটকে তুলে ধরেন পোস্তার আড়ৎদারেরা। তারা বলেন, ‘বেশির ভাগ আড়তদারের টাকা পাওনা আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। এক বছর হলেও ট্যানারি মালিকরা সেই টাকা পরিশোধ করেননি। একটি চামড়া লবণ লাগিয়ে প্রস্তুত করতে সবমিলিয়ে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়। এখন দুই হাজার চামড়া ক্রয় করতে ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন।

আড়তগুলোতে এবার শ্রমিকদের ভিড় নেই। বৃষ্টির দিনে অনেক আড়ত খোলাও হয়নি। যেগুলো খুলেছে তাতে মহাজন নেই। দুয়েকটি আড়তে লবণ লাগানো চামড়াগুলোকে ঠিকঠাক করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। রাস্তায় চামড়ার ছেড়া অংশ পড়ে আছে। কোথাও স্তুপ আকারে পড়ে আছে। অবসর সময় পার করছেন কর্মচারীরা। কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আসলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। এমনকি ১০০ টাকা দামেও গরুর চামড়া কিনছেন না আড়তদাররা।

আড়তের কয়েকজন শ্রমিক জানান, যদি চামড়ার দাম থাকত, তাহলে চামড়ার সব অংশের কদর থাকত। এই যে রাস্তায় গরু, ছাগলের ফাটা চামড়া, মাথার চামড়া পড়ে আছে, সেগুলোর কিছুই থাকত না, সব বিক্রি হয়ে যেত। এমন পরিবেশ এর আগে কখনো দেখেননি বলে জানান তারা।

এদিকে পোস্তার পচা চামড়া পরিষ্কার করতে মাঠে নেমেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বৃষ্টির মধ্যেই সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে পচা চামড়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, পোস্তায় এত নোংরা পরিবেশ তারা আগে কখনো দেখেননি। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর