এত অাম কিভাবে, আর কেনইবা প্যাকেট করলো? এত কষ্ট করে প্যাকেট করার প্রয়োজনই বা কি ছিলো? এমন প্রশ্ন মনে অাসতেই পারে!
এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্যাকেটের মাঝ বরাবর অাম রেখে মোড়ানোকে বলা হয় 'ফ্রুট ব্যাগিং'। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া পোঁকামাকড় ও স্পট থেকে অামকে রক্ষা করতেই ব্যবহৃত হয় এই ফ্রুট ব্যাগ। এতে অাম থাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ, দাগহীন আর ফ্রেশ। অামের গায়ে লাগে না রোদ-বৃষ্টির ছোঁয়া।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলা হওয়া সত্ত্বেও বছর তিনেক অাগেও এই জেলা থেকে আম রপ্তানি ছিলো শূন্যের কোঠায়। ২০১৫ সালে চীন থেকে আমদানি করা একটি বিশেষ জাতের ব্যাগ দিয়ে এখানে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয় ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতি। পরবর্তীতে লাভজনক ও বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হওয়ায় বেড়েছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার।
বর্তমানে ফ্রুট ব্যাগিংয়ে অাম উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে এ জেলার অাম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও। এ বছর শুধু মাত্র শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ৬০ মেট্রিক টনের বেশি অাম যাবে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
কৃষিবিদরা বলছেন, আম উৎপাদনে ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। পরিবেশ ও জমির উর্বরতা রক্ষায়ও এ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্হিবিশ্বে এ অামের চাহিদাও বেড়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার সরকারি কৃষি কর্মকর্তা অাবু অাল অামিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে অাম ফ্রুট ব্যাগিংয় করা হচ্ছে। শিবগঞ্জে প্যাকিং বেড়েছে। এ বছর শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ৬০ মেট্রিক টনের বেশি অাম রপ্তানি হবে। পুরো জেলায় কমপক্ষে দেড়শ মেট্রিক টনের বেশি অাম রপ্তানি হতে পারে। গতবার ইতালি, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অাম রপ্তানি করা হয়েছিলো। এবার আম মধ্যপ্রাচ্যেও যাবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হচ্ছে ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে। শিবগঞ্জের চক দৌলতপুর, চতুরপুর, লাওঘাটা, সেলিমাবাদ, জগন্নাথপুর, কানসাট, মনাকষা, চককীত্তিসহ বিভিন্ন এলাকায়ও ফ্রুট ব্যাগিং করা অসংখ্য অাম বাগান দেখা যায়।
শিবগঞ্জের চতুরপুরের অাম চাষী মাহবুরর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ফ্রুট ব্যাগিংয়ে আম চাষ বেড়েছে। এর ফলে অামে কীটনাশকের ব্যবহারও অনেক কমেছে। অামার ২০ বিঘা জমির অাম বাগানের ১০ বিঘাতে ফ্রুট ব্যাগিং করা।
তবে ফ্রুট ব্যাগিং করা অাম চাষে খরচ বেশি হয় -বলে জানালেন অারেক অাম চাষী অামির হোসেন।
তিনি জানান, 'প্যাকেট প্রতি খরচ পড়ে তিন থেকে চার টাকা। অামের গায়ে প্যাকেট লাগানোর জন্য শ্রমিককে দিতে হয় তিন টাকা। সব মিলে একটা অামে ফ্রুট ব্যাগিং করতে খরচ পড়ে ৭ টাকা ৮ টাকা। প্যাকেটের দাম একটু কমালে ভালো হয়- তাহলে চাষীরা উদ্বুদ্ধ হবে এ পদ্ধতিতে অাম চাষও বাড়বে; দেশের অাম বাইরেও যাবে বলেন অামির।