পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে স্মরণকালের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-23 18:03:05

রাজশাহী থেকে রাতের ট্রেনে ঢাকায় ফিরে যারা অফিসে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের হাজিরা খাতায় পড়েছে লাল দাগ। বরং স্টেশনে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে কামড় খেয়েছেন মশার।

কেউ কেউ টিকিট কেটেও ভিড় ঠেলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রেনে। কারণ স্মরণকালের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ট্রেনগুলো। বিরতিহীন বনলতা ছাড়া আন্তঃনগর সকল ট্রেন চলছে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের আগে থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চলছে অচলাবস্থা। যার ধকল ঈদের পরও কাটেনি, বরং বেড়েছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটের ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশন ছেড়েছে রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টায়। আর রোববার সকাল ৭টার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়েছে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে।

আরও পড়ুন: ৭ বছর পর পরিবারের কাছে পাচার হওয়া খাদিজা

রোববার দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনে ছোট-বড় ব্যাগ-বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে বসে থাকা যাত্রীদের চোখেমুখে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ। সকাল ৭টার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে স্টেশনে আসার পর সহস্রাধিক যাত্রী হুড়মুড়িয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন।

ছুটি শেষে ঢাকা ফিরছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফসানি সাদিক। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সকার ৭টায় সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্টেশনে বসে আছি। ট্রেনের কোনো খবর নেই। ফলে ব্যাগপত্র নিয়ে স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’

৮ ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী ফজলে রাব্বী মোবাইলে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। শনিবার রাতের ট্রেনে আগেই টিকিট নিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল রাতের রওয়ানা হয়ে সকালে ঢাকা পৌছে অফিসে যোগ দেব। কিন্তু তা পারিনি। এখন দুপুর প্রায় ১টা বাজে, তবুও পথে আছি।’

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে গৃহবধূর ‘মুত্যু’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা এএএম শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে প্রতিটি ট্রেন। ট্রেনের ভেতর যাত্রীদের ব্যাপক চাপ। ছাদও ফাঁকা যাচ্ছে না। ফলে গতির চেয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাই আগে ভাবতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ে আসতেও পারছে না। আমার দায়িত্ব পালনকালে এমন শিডিউল বিপর্যয় দেখিনি।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে বন্যায় উত্তরাঞ্চলের রেললাইন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা কাটিয়ে ওঠার আগেই ঈদের চাপ। যাত্রীরা টিকিট না পেলেও ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান। ফলে যাত্রীদের চাপে শিডিউল বিপর্যয় বেড়েছে। সিঙ্গেল লাইন যতোদিন ডাবল না হবে, ততোদিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কমবেশি থাকবেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর