চাঁপাইয়ের সব নষ্ট, পচা আম যায় জুস কোম্পানিতে!

, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-28 12:27:41

কিছুদিন পরেই বাজারে উঠবে অাম। অাম আহরণের অাগে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গাছের অাম নিয়ে হচ্ছে বেচা- বিক্রির নানা হিসেবে-নিকেশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অামচাষী ও লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরাও গাছ ধরে অাম ও বাগানের গাছসহ অাম বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে পোকামাকড়ের হাত থেকে অামকে বাঁচাতে দিয়ে দিচ্ছেন কীটনাশক।

তবে অাম গাছ থেকে নামিয়ে বিক্রির অাগে চলে অামের শ্রেণীবিন্যাস। কোন অাম কিভাবে বিক্রি করবেন, কার কাছে করবেন-এসব চিন্তাভাবনা।

আমের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, অামের শ্রেণীবিভেদ হয় তিন ভাবে। ১ নম্বর অাম সবচেয়ে ভালো দামে বিক্রি হয়। এ অামে দাগ, পোকামাকড় থাকে না। একবারে ফ্রেশ মিষ্টি স্বাদের অাম। দেশের বাইরে রপ্তানির পাশাপাশি সব মহলে এ অামের কদর রয়েছে। ২ নম্বর দেখতে অতটা ভালো না হলেও মিষ্টি, স্বাদে ভরপুর। ১ নম্বর অামের চেয়ে একটু কম দাম। ব্যবসায়ীদের কাছে এ অামেরও ব্যাপক কদর।

শেষ শ্রেণীর অাম হলো তিন নম্বরি অাম; পচা, অর্ধেক পোকায় খাওয়া, শীল পড়া বা দাগি প্রায় অচল অাম। প্রচলিত রয়েছে, অাগেকার দিনের রাজা-বাদশা বা জমিদারের গিন্নীরা নাকি তিন নম্বরি অর্থাৎ শীলপড়া বা দাগি আম বাড়ির কাজের লোকদের খাওয়ার জন্য দিত।

তবে অাজকের দিনে এ তিন নম্বরি অাম কৌশলে ধনী-গরীব সবার পেটেই যাচ্ছে, রঙিন মোড়ক অার অার্কষণীয় বিজ্ঞাপনের বদৌলতে অামের জুস হিসেবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অাম চাষী অার ব্যবসায়ীদের কাছে ১ ও ২ নম্বর অামের কদর থাকলেও তিন নম্বর অাম কারো কাছে গছিয়ে দিতে পারলেই তারা বাঁচে। সেই আম বিক্রির টাকাকে বাড়তি লাভ হিসেবেও ধরে নেয়। এ নষ্ট অামের কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন অামের জুস তৈরির কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে।

ব্যবসায়ী ও চাষীদের কাছ থেকে পচা, দাগি ও পোকামাকড়ে নষ্ট হওয়া অাম নামমাত্র দামে কিনে নেয় দেশের শীর্ষস্থানীয়সহ বিভিন্ন ছোটবড় জুস কোম্পানি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ উপজেলা, ভোলা, কানসাট, রানীরহাট এলাকার অাম বাগানের চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো জুস কোম্পানিই ভালো অাম কেনে না। ফেলে দেওয়া অামগুলো জুস কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। সেজন্য কোম্পানিগুলো অাগে থেকেই চুক্তি করে রাখে বাগান মালিকদের সঙ্গে।

জুস কোম্পানিগুলোর অাম কেনার বিষয়ে বলতে না চেয়েও শিবগঞ্জের চতুরপুরের অাম ব্যবসায়ী অালমগীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, অামের তিনটা ভাগ করা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের অাম বাজারে বিক্রি করি। তৃতীয় ভাগের অাম জুস কোম্পানিকে দেই। জুস কোম্পানিগুলো না থাকলে হয়ত এ অামগুলো ফেলে দিতে হতো। এই নষ্ট আম ক্রেতাদের মধ্যে অনেক বড় বড় জুস কোম্পানিও রয়েছে।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বয়োজ্যেষ্ঠ এক চাষী রাগান্বিত স্বরে বলেন, জুস কোম্পানির লোক ফ্রেশ অামের কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অামার বয়স তো কম হলো না, যুবক বয়স থেকে দেখে অাসছি, একজন জুস ব্যবসায়ীও একটা ভালো অাম কেনে না। স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে পচা, দাগ পড়া, পোকায় খাওয়া, ফেলে দেওয়ার যোগ্য অাম তারা কিনে নেয়। অাম ব্যবসায়ীরাও এসব অাম বিক্রিকে বাড়তি লাভ হিসেবে ধরে নেয়।

বাগান মালিক ও অাম ব্যবসায়ীরা জানায়, বাজারে ১ নম্বর অাম ২,০০০- ৩,০০০ টাকায় মণ (৪৭ কেজি) বিক্রি হয়। ২ নম্বর অাম দেড় হাজার থেকে ২,০০০ হাজারের মধ্যে। অার পচা, শীলপড়া অাম প্রতিমণ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে পচা দুর্গন্ধযুক্ত হলে ১৫০ -২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর