ঢাকা: যতদূর চোখ যায় বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বাগান আর বাগান! কোথায় যে বাগানের শেষ – তার সীমানা নির্ধারণ স্থানীয়দের কাছেও দূরহ! ঢাকা থেকে এসেছি শুনে অটোর সহযাত্রী স্থানীয় বাসিন্দা নাজমা আক্তার বললেন, ‘কোন বাগানে যাবেন। সব বড় বড় বাগান। দেখে কুলাতে পারবেন না। কোথায় শেষ আমরাও জানি না।’
তার পরামর্শে শিবগঞ্জ সদরে জালমাছমারি পাড়ায় নামলাম। নেমেই দেখলাম বাগানের শুরু। সকালের আভা মিলিয়ে তখন দুপুরের রোদ। বাগানের সবুজে প্রশান্তির ছোঁয়া থাকলেও তা ভেদ করে শরীরে ভ্যাপসা গরমের উপদ্রপ।
আম বাগানের বড় একটি গাছের গোড়ায় বসে নকশী কাঁথা সেইলায়ে ব্যস্ত গ্রামের নারী-তরুণীরা। এলাকার সবচেয়ে বড় বাগান কোনটা, তাতে কি পরিমাণ আম হয় -জানতে চাইলে তরুণী মারুফা বলে ওঠে, ‘সামনে ভোলার বাগান, ওখানে যান কথা বলার মানুষ পাবেন। উৎসুক মেয়েটি নির্দেশনা দিয়েই থামলেন না। বাগানে পৌঁছে দিয়ে তবেই ফিরলেন।
তাকে থামিয়ে দেখে ‘বৃদ্ধ’ বলল, ও আছিরউদ্দিন । কয়েকটা বাগান আছে, অন্যের আম বাগান নিয়েও কাজ করে। সব বলতে পারবে।
কথায় কথায় জানা গেল, আছিরউদ্দিন চার বছরের জন্য তিনটি বাগান লিজ নিয়েছে। তবে আম চাষী বা ব্যবসায়ীর চেয়ে আছির উদ্দিনের মূল পরিচয় হলো গাছ পরিচর্যা ও গাছের কলমের জন্য। এই মৌসুমে প্রায় চার হাজার গাছ কলম করেছেন তিনি। ফজলীর ডালে জোড়া দিয়েছেন ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতের ডালে হয় আম্রপলি, আবার ল্যাংড়ার ডালে আশ্বিনা বা শুধু ফজলির ডালে জোড়া দিয়েছেন ল্যাংড়া, আশ্বিনা, আম্রপলি, মোহনভোগ আরো কয়েকটি জাতের আম।
আছির উদ্দিন বলেন, কলমের অনেক চাহিদা। এক গাছে অনেক জাতের ডাল কলম করে চাষী বুঝতে চায় কোন আমের ফলন বেশি। আজকাল গোপালভোগের ফলন কমে যাওয়ায় -আম চাষীরা এই গাছের উপর কলম করে বেশি। যার যাদের বাগানে কম গাছ; তারা একটি গাছে কলম করে সব জাতের আমের স্বাদ পূরণ করে।
দীর্ঘ ১৫ বছর এ কাজ করছেন আছিরউদ্দিন। বললেন, কলম করলে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। দীর্ঘদিনের পুরোনো গাছ যেগুলো ফল কম হয়, বা ফল হয়ই না, সেসব গাছেও কলম করে ফল পাওয়া যায়।
আছির উদ্দিনের শুধু কলম নিয়ে অভিজ্ঞতা যে –তা নয়, বাপ-দাদাদের সঙ্গে আম বাগানে তার কেটেছে শৈশব। ফলে কখন আম পাকবে, খেতে মজা হবে, আমের ফলন কেমন হবে- এসব বলে দিতে পারেন একবাক্যেই।
শেষ সময়ে বললেন আম খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে, ‘আমে যখন ডানা হবে তখনই আম খেতে মজার হবে- বুঝাইবার পারসি’।