রাজশাহী চিড়িয়াখানায় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে শিশু খেলনা!

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-25 14:57:57

রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম দু’দিন আগে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তানিয়া আক্তার রিক্তাকে নিয়ে ঘুরতে যান নগরীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। সেখানে শিশুদের জন্য থাকা স্লাইডারে ওঠার বায়না ধরেন শিশু রিক্তা। স্লাইডারে উঠে স্লাইড করতেই উরু কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে শিশুটির। দেখা যায়- স্লাইডারের ভেতরে ভেঙে ধারালো হয়ে ওঠা অংশে লেগে কেটে রক্তাক্ত হয়েছে ওই শিশু।

বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে এমন দুর্ঘটনার কথা জানান ভুক্তভোগী শিশুর বাবা আশরাফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'আমার বাচ্চাকে নিয়ে একজন চিকিৎসকের কাছে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই চিকিৎসক জানান- স্লাইডারের ভাঙা অংশে মরিচা ধরে যাওয়ায় এতে কারো হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে ইনফেকশন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।'

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের উন্মুক্ত বিনোদন এবং মানসিক শক্তি বাড়ানোর তাগিদ নিয়ে নির্মাণ করা উদ্যানের খেলনাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। রাইডগুলো তার সক্ষমতা হারিয়েছে এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে খেলনা তৈরির জন্য তা ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনটির কাঠামোও নেই।

অনেক খেলনা ভেঙে যাওয়ার কারণে আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখা হয়েছে। ভেঙেচুরে একাকার অবস্থা হাইড্রোলিক গাড়িটিও। জাম্পিং রোলারটিও পুরোটাই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ভেঙে গেছে সকল স্লাইড। কোনোটির স্লাইডারে চড়ার রাস্তার নেই প্ল্যানসিট। এমনকি সিঁড়িও ভাঙা।

জানা যায়, শিশুদের বিনোদনের জন্য ২০১৩ সালে কেনা হয় এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার পাঁচ সেট রাইড। এগুলোতে ফ্রি খেলার সুযোগ পেত শিশুরা। পাঁচ বছর ব্যবধানে অযত্ন-অবহেলায় সবগুলো খেলনা নষ্ট হয়ে গেছে। বিনামূল্যে বিনোদনের কোনো সুযোগ না থাকায় সেই সব ভাঙা খেলনাগুলোতেই খেলে বেড়াচ্ছে শিশুরা। শিশুদের ফ্রি রাইডগুলোগুলো ভেঙে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও।

অভিভাবকদের দাবি- দীর্ঘদিন থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব খেলনাগুলো পড়ে আছে। ফলে এখানে খেলতে গেলে শিশুদের শরীর কেটে গেলে মারাত্মক জখম হয়।

রাজশাহী বেতারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান তার নাতিকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'খেলতে গিয়ে সে রাইড থেকে পড়ে গিয়েছিল। ব্যথা পেয়েছে। এখানে স্লিপারসহ বেশিরভাগ রাইডই নষ্ট। আমি মনে করি- এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার'।

রাজশাহীর মোহনপুর থেকে ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ঘুরতে আসা রুনা লায়লা বলেন, 'এখানে তো খেলার কিছুই নেই। সব ভাঙা। খেলনাগুলো ভালো থাকলে আরও ভালোভাবে বাচ্চারা খেলতে পারত। মজাও পেত। এখন খেলনা ভাঙার কারণে বাচ্চারা খেলতেও পারছে না মজাও পাচ্ছেন না।'

চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি আমি লক্ষ করছি। বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারপরও অতিদ্রুত এটি সংস্কার করার জন্য আবারও তাদেরকে জানানো হবে।' তারা এটি সংস্কার করবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, 'এসব রাইড ফাঁকাস্থানে রাখার জন্যই নষ্ট হয়েছে। অনেকটা ব্যবহারের জন্যও নষ্ট হয়েছে।' তবে এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে অব্যহতি করেছেন বলেও জানান।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, 'খুব শিগগিরই এগুলো মেরামত করা হবে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নতুন রাইড বসানো হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর