আরএমপি-জেলা পরিষদ দ্বন্দ্বে দুই মন্ত্রণালয়ের কমিটি

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 01:03:21

রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে পাঁচ দশমিক ৯৫ একর জমি নিয়ে ছিল জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। এর মধ্যে জমির পশ্চিম দিক থেকে এক দশমিক ৩৯ একর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপির) কাছে বিক্রি করে জেলা পরিষদ। আর পূর্বের অংশের ডাকবাংলো ভাড়া নিয়ে চলছিল আরএমপি সদর দফতরের কার্যক্রম। কিন্তু এখন পুরো জমিটিই দখলে নিয়েছে আরএমপি।

সেখানে এখন আরএমপির স্থায়ী সদর দফতরের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য জেলা পরিষদের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলোটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। চলতি বছরের ৬ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব সহ সকল সদস্য আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে দেখা করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ করা হয়নি। ফলে বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা পরিষদ ও আরএমপির জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর-উর-রহমানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের গঠন করে দেওয়া এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মাপ-জোখ করে জমির সীমানা নির্ধারণ করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব আজীজ হায়দার ভুঁইয়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইফফাত আরা মাহমুদ ও আরিফুল ইসলাম খান, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাব উদ্দীন, উপ-মহাপরিদর্শক আবু হাসান মাহমুদ, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, আরএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবীর, স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহীর পরিচালক শ্যাম কিশোর রায় প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোটি পুলিশ ভাড়ায় ব্যবহার করত। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ভাড়া পরিশোধ করে আরএমপি। পরবর্তীতে আর ভাড়া প্রদান করা হয়নি। তবে জেলা পরিষদের পাঁচ দশমিক ৯৫ একর জমি থেকে এক দশমিক ৩৯ একর জমি কেনার পর বাকি জমিটুকুও বিক্রির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

কিন্তু তখন জেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান না থাকার কারণে জমি বিক্রি করা যায়নি। ঐ সময় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচিত চেয়ারম্যান আসার পর বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান এলেও পুলিশের কাছে জমি বিক্রি করা হয়নি। কিন্তু তারপরও জেলা পরিষদের জমি দখল করে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আরএমপির স্থায়ী সদর দফতর নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আরএমপি জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ডাকবাংলোর সামনে প্রধান ফটক নির্মাণের কাজ শুরু করে। তখনও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ ঠিকই সেই প্রধান ফটক নির্মাণ করেছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৭ জুলাই জেলা পরিষদ আরএমপির কাছে বিক্রি করে দেওয়া জমির সীমানা বুঝিয়ে দেয়। তখন সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়। এই বিক্রি করা জমির মধ্যে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর পাঁচ শতাংশ পড়েছিল। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরের পর ভাড়া প্রদান না করেই পুলিশ পুরো ডাকবাংলোটি অবৈধভাবে দখলে রাখে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাকবাংলোটি ভাঙতে শুরু করে।

এ নিয়ে ঐ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি এবং ১৮ মার্চ দুটি চিঠি দেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু তারপরেও ডাকবাংলো ভাঙা বন্ধ করা হয়নি। বরং পুরো জমিটিই দখলে নিয়ে আরএমপির সদর দফতর নির্মাণের কাজ চলছে।

জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘চিঠিতে কাজ না হওয়ায় আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানাই। তিনি বলেছিলেন- রাজশাহীতে নতুন এসেছেন, জমির বিষয়ে কিছুই জানেন না। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়টির সমাধান করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়নি। তবে এখন জমির সীমানা নির্ধারণে একটি কমিটি হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হবে।’

আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘জেলা পরিষদের কাছ থেকে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে যে অংশটুকু ক্রয় করা হয়েছে, সেই অংশটুকুই ভাঙা হয়েছে। আর এখন যেহেতু আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি গেছে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর