‘নির্মল বায়ু’র টাকায় কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ!

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-31 14:04:52

প্রকল্পের খরচে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কাজে লাগানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ দেশের জন্য অকল্যাণকর হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

ভবিষতে কেউ কোন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ গেলে তিনি যেন দেশে ফিরে অন্তত কিছুদিন ওই প্রকল্পের বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন সে ব্যাপারে নীতিমালা তৈরির কথা বলছে সংসদীয় কমিটি।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প। এ প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্প চলাকালে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের ৩২ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই এখন অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন, নয়তো বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই তারা অবসরে গেছেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সবশেষ বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি মনে করে এভাবে বিদেশ ভ্রমণ করে টাকা খরচ করে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করার কোন অর্থ হয় না।

প্রকল্পে খরচ ধরা ছিল ৪৬০ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের সেই টাকা খরচ করে এখন আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের অর্থের মধ্যে জিওবি ৭ কোটি ৯৪ লাখ এবং সাহায্য ৪৫৩ কোটি ২০ হাজার টাকা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পথচারী চলাচল বৃদ্ধি, ট্রাফিক গতি বৃদ্ধি, ট্রাফিক দুর্ঘটনা হ্রাস করা, পথচারী ও গাড়ি চালকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে দুই দফা সড়ক দুর্ঘটনার কারণে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বাস্তবায়নের খাতায় দেখানো হয়েছে—৮৩ দশমিক ৯১ কি. মি. রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত এবং ২০টি অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। ২১টি ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল রিমোট কন্ট্রোলসহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাস্তবে এসব যাত্রী ছাউনি ব্যবহার হয় না। আর রিমোট কন্ট্রোল সিগনালও চলে না।

প্রকল্প চলাকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ ৩২ কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তা। যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে শুধু মেয়র আর কাউন্সিলর ছাড়া বাকিরা কেউ নেই ডিএসসিসিতে। কাজেই অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে এভাবে বিদেশ সফরকে মেনে নিতে পারছে না সংসদীয় কমিটি।

অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে বিদেশ সফর করেছেন ডিএসসিসি’র ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুল হক শামীম, ডিএসসিসি প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব। অতিরিক্ত সচিব মো. আলমগীর ডিএনসিসি প্রশাসক থাকাকালে বিদেশ সফর করেছেন। অতিরিক্ত সচিব মো. আক্তার হোসেন ভূঁইয়া, অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ যিনি বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য, ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুলতান উল আলম চৌধুরী, মো. আনছার আলী খান বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত।

এছাড়া ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বিলাল বর্তমানে এনবিআর সদস্য, বি এম এনামুল হক যুগ্ম সচিব প্রধান নির্বাহী ডিএনসিসি বর্তমানে অবরপ্রাপ্ত, এ এস এম ইমদাদ দস্তগীর মহা ব্যবস্থাপক (পরিবহন) ডিএসসিসি, ব্রি. জে. আব্দুল কাদির প্রধান প্রকৌশলী ডিসিসি (অবিভক্ত) অবসরপ্রাপ্ত, ব্রি জে. মো. আহসানুল হক মিয়া প্রধান প্রকৌশলী ডিএনসিসি (অবরপ্রাপ্ত), ডিএসসিসি প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ অবসরপ্রাপ্ত, প্রধান প্রকৌশলী ডিএসসিসি মো. রেজাউল করিম প্রধান কোথায় আছেন তার কোন হদিস নেই। মো. আব্দুস সালাম অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ডিএসসিসি (অবসরপ্রাপ্ত), মো. সেহাব উল্লাহ প্রকল্প পরিচালক কেইস প্রকল্প (অবরসপ্রাপ্ত), মোছা. শাহিনা খাতুন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোন-১, মফিজুল ইসলাম আইন কর্মকর্তা (অবরসরপ্রাপ্ত)।

বিদেশে ট্রেনিং নিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ নির্বাহী প্রকৌশলী অঞ্চল-১, মো. মফিজুর রহমান খান নির্বাহী প্রকৌশলী কেইস প্রকল্প. মো. রফিকুল ইসলাম সহকারী প্রকৌশলী ডিসিসি বর্তমানে ডিএনসিসি, মুনসী মো. আবুল হাসেম তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ডিএসসিসি, মোহাম্মদ আরিফুল রহমান তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী টিইসি ডিএনসিসি, নাঈম রায়হান খান সহকারী প্রকৌশলী টিইসি ডিএনসিসি, ইশতিয়া মাহমুদ সহকারী প্রকৌশলী অঞ্চল-৩ ডিএনসিসি, মো. আব্দুর রহিম মিয়া উপ সহকারী প্রকৌশলী ডিসিসি বর্তমানে ডিএনসিসি, তৌহিদ ইবনে আকরাম সহকারী প্রকৌশী কেইস প্রকল্প ডিএসসিসি, সুপ্রতীম সেনগুপ্ত সহকারী প্রকৌশলী কেইস সাইফুল ইসলা সহকারী প্রকৌশী টিইসি ডিএনসিসি, মো. সাইদুর রহমান নির্বাহী প্রকৌশলী ডিএনসিসি।

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, প্রশিক্ষণের নামে ঢালাওভাবে লোকজন পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণের সুফল আমাদের পাওয়া দরকার, সেটা তো আমরা পাচ্ছি না। আসলে এর কোন নীতিমালা ছিল না। আমরা তাই নীতিমালার ওপর জোর দিয়েছি। নীতিমালা থাকলে কারও পছন্দ-অপছন্দের বিষয় থাকবে না। যারা যোগ্য তারাই প্রশিক্ষণে যাবেন। তাছাড়া যারা ১০-১৫ বছর সার্ভিস দিতে পারবেন তারাই যাবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর