পদ্মার ভাঙনে ঘরহারা ২০০ পরিবার, আতঙ্কে ১৫ চরবাসী

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-21 05:20:55

রাজশাহীতে উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে ফেঁপে উঠছে পদ্মা। বিপদসীমার মাত্র ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। তবে সেটা রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধা এলাকায়। যেটিকে পদ্মার রাজশাহী পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়। পদ্মার মূল পয়েন্টে বিপদসীমা এখনো অতিক্রম না করলেও জেলার বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে বসত-ভিটা ছাড়া হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন চকরাজাপুরের ১৫টি চরের মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মায় ফুলে ফেঁপে ওঠা পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে নদীর পাড়। পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে পাড় ভেঙে চকরাজাপুর ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে গাছপালা। আর ৫০ গজ ভাঙলেই পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতের মোড় ও কিশোরপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে ঠেকবে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। তবে ভাঙন রোধে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচে পদ্মার পানি

চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর চরের মান্নান মন্ডল, মিজানুর রহমান, সামাদ মালিথা, হানে ফকির, হাফিজুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, হানু কাজী, সাইদুল ইসলাম, মজনু মোল্লা ও চকরাজাপুর চরের হাসান শেখ, জব্বার মন্ডল, হিরো মন্ডল, শাহিনা বেগম, ফজলু শিকদার, আকতার মন্ডল, রহমান মোল্লা হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তাদের মতো ভাঙন আতঙ্কে ঠিকানা খুঁজছেন চকরাজাপুর চরের আরো শতাধিক পরিবার। ঠিকানা হারিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়েও দুঃশ্চিন্তা তাদের। পানিবন্দি হয়ে গবাদিপশু নিয়ে অবর্ণনীয় জীবন যাপন করছেন কালিদাখালি, চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্ব চকরাজাপুর, জোতাশি, মানিকের চর, লক্ষিনগর, টিকটিকিপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুর, নওশারা-মহদীপুর চরের মানুষ।

স্থানীয় সবুর মল্লিক ও লিটন আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, নদী তীরবর্তী বাঁধের পশ্চিমপাড় থেকে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে অরক্ষিত এলাকার আরও অনেক জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।

চকরাজাপুর চরের মোস্তাক আহম্মেদ শিকদার বলেন, ‘গত কয়েক দিনে পদ্মায় বিঘার পর বিঘা জমির ধান, পাট, আবাদি জমি, গাছপালা হারিয়ে গেছে। মানুষদের সহযোগিতা তো দূরের কথা সান্ত্বনা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। বারবার সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভাঙন ঠেকানোর আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’

আরও পড়ুন: বর্ষায় শান্ত পদ্মা ফুঁসে উঠছে শরতে

পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ার শওকত জামান বলেন, ‘কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমিসহ গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে দুই শতাধিক পরিবার। তারা এখন ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত।’

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা এরমধ্যেই ৩০টি পারিবারের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেছি। অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে তাদের সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’

জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহিন রেজা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ৩০টি পরিবারের তালিকা পেয়েছি। সেটি উপরমহলে জানানো হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পেলে তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া ভাঙনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর