পুকুর খননে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাচ্ছেন বিএমডিএ’র ১৬ কর্মকর্তা!

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আবিদ, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-26 06:34:12

দীঘি ও পুকুর খনন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাচ্ছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ১৬ জন কর্মকর্তা। ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কর্মকর্তাদের মাথাপিছু ব্যয় হবে প্রায় ৮ লাখ টাকা। ফলে গৃহীত প্রকল্পের ১২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার এক কোটি ২৮ লাখ ব্যয় হবে পুকুর খনন প্রশিক্ষণে।

বিএমডিএ সূত্র জানায়, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৪৩টি উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কম। সেচকাজে মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে বিএমডিএ সদর দপ্তরে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্মার্ট কার্ড বেইজড প্রিপ্রেইড পাম্প ইউজেস অ্যান্ড এনার্জি মিজারিং সিস্টেম প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) পরিচালক প্রকল্প প্রস্তাবটি প্রস্তুত করেছিলেন।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী- পুকুর পুনঃখননের জন্য প্রতি লাখ ঘন মিটারে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং দিঘি পুনঃখননে ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেটি কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে ওঠে।

গত ২৭ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। অনুমোদনের পর প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হয়। তা সম্পন্ন হলে প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে ৭১৫টি পুকুর ও ১০টি দিঘি পুনঃখনন, ৮৫টি সৌরচালিত লো লিফট পাম্প স্থাপন, ৮০টি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ, ৮৫টি প্রিপেইড মিটার ক্রয়, ৯ হাজার মিটার ফিতা পাইপ ক্রয় এবং দেড় লাখ বৃক্ষ রোপণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এই প্রকল্পে ১৮ জন কর্মকর্তা ও ৮ জন কর্মচারী কাজ করবেন। তাদের বেতন ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি। তাদের ভাতা যাবে সোয়া ৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী দুই শিফটে ১৬ জনকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

এছাড়া ৭২৫টি পুকুর ও দীঘির জরিপে ব্যয় হবে সাড়ে ৭৩ লাখ টাকা। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণের জন্য ইউপিভিসি পাইপ কেনা হবে ১ হাজার মিটারের ৮৫টি, যাতে খরচ ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ফলে প্রতিটি পাইপের মূল্য পড়ছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আর এই পাইপ প্রতিটি বসাতে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা। ৮০টি পাইপ বসাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

শুধু তাই নয়, ৪২ মাস মেয়াদী এই খনন কার্যক্রমের জন্য বাড়ি ভাড়া বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার টাকা। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এই প্রকল্পের জন্য নিয়োগ পাবেন তাদের সবাই বাড়ি ভাড়া পাবেন। প্রকল্পের সব খরচই বহন করবে সরকার।

তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে প্রকল্পের ১৬ কর্মকর্তার পুকুর খনন প্রশিক্ষণে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে খাল খননের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার নজির রয়েছে। অথচ পুকুর ও দীঘি পুনঃখননের প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যাওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। সরকারি কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্যই এসব ব্যয়ের খাত তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী অঞ্চলের সমন্বয়কারী সুব্রত পাল বলেন, ‘প্রকল্পের টাকা জনগণের। এই টাকা খরচের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা থাকতে হবে। হ্যা, প্রশিক্ষণের দরকার আছে। কিন্তু তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেটাও আগে দেখতে হবে। দু’একজন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যেতে পারেন। তারা এসে অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। তাহলে খরচ কমবে।’

জানতে চাইলে বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল হক বলেছেন, ‘বিদেশে অনেক উন্নত উপায়ে পুকুর-দীঘি খনন করা হয়। সেগুলো সরেজমিনে না দেখলে অভিজ্ঞতা হবে না। শুধু পুকুর-দিঘি খননই নয়, উন্নত দেশে কীভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয় এবং ভূ-উপরিস্থ পানি কাজে লাগানো হয় সেটাও প্রশিক্ষণের সময় কর্মকর্তারা দেখবেন। তাই বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর