'গুম নিয়ে সরকার নির্মম রসিকতা করে'

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-24 23:06:25

গুম নিয়ে মানুষের সঙ্গে সরকার নির্মম রসিকতা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বের করাই হবে জাতির সবচেয়ে ভালো উপহার।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে 'গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা এ দাবি জানান। গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন 'মায়ের ডাক' নামক একটি সংগঠন সভাটির আয়োজন করে।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সব সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথা বলা হয়, গুম তো আমরা করিনি। তারা পারিবারিক বিরোধের কারণে আত্মগোপন করেছে, বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মগোপন করেছে। এ ধরনের নির্মম রসিকতা দিনের পর দিন আমাদের সঙ্গে করা হয়।’

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা গুম না করে থাকেন, তাহলে গুম হওয়ার সময় অনেক ঘটনায় আপনাদের প্রশাসনের গাড়ি এবং আপনাদের বাহিনীর লোককে দেখা যায় কেন? যদি আপনারা গুম না করে থাকেন, তাহলে গুমের পরিবার যখন মামলা করতে যায় তখন মামলা কেনো গ্রহণ করা হয় না? দশ বছর ক্ষমতায় আছেন কারা গুম করছে সেটা কেন বের করতে পারছেন না?’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে একটা গুমও আল্লাহ করে নাই। আল্লাহ যদি কাউকে গুম করে, তাহলে তার জানাযার পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার (প্রধানমন্ত্রী) গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতীয়রা এবং ইসরায়েলের মোসাদ এরা যখন সম্মিলিতভাবে কাউকে গুম করে তার সংবাদ আপনিও পুরোপুরি জানেন কিনা তা আমার জানা নেই। আপনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছেন। জাতির সবচেয়ে ভালো উপহার হবে যারা গুম হয়েছে তাদের সবাইকে ফেরত দেওয়া। তাহলে এরা আপনার জন্য দোয়া করবেন।'

গুম হওয়া তেজগাঁওয়ের ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘৫ বছর ৮ মাস ধরে আমি আমার ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আজকে আমি আমার মায়ের চেয়ারে বসেছি, এটা আমার জন্য কতটা কষ্টের তা বলে বুঝাতে পারব না। কারণ, ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে আবার না মাকেই হারিয়ে ফেলি! মা আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাইকে ফিরে পাচ্ছি না। আমরা কিচ্ছু চাই না। আমাদের একটাই চাওয়া আমার ভাইসহ এখানে উপস্থিত সকলের স্বজনকে ফিরিয়ে দিন।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে এতগুলো মানুষ দাবি করছে, তাদের স্বজনরা গুম হয়েছে। এই দাবির কথা চিন্তা করে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে দেখান। যারা এখানে ছবি হাতে বসে আছে, তারা কি মিথ্যা কথা বলছে? তদন্ত করেন, তদন্ত করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করেন।’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ব‌লেন, ‘আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চেয়েছি, যে রাষ্ট্র আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পরে বেঁচে থাকার যে অধিকার, রাষ্ট্র সেটাও কেড়ে নিচ্ছে। রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসী হয়ে যায়, তখন মানুষের জন্য এ রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন থাকে না।’

গণসংগহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন অবৈধভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মানুষ গুম করে তখন সেটা গুন্ডা বাহিনীতে পরিণত হয়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য থাকে না। তারা এখন গুন্ডা বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আকমল হোসেনসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গুম হওয়া পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর