আসামে বাদ পড়াদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে

ঢাকা, জাতীয়

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-17 14:16:08

ভারতের আসাম রাজ্য শনিবার (৩১ আগস্ট) চূড়ান্ত নাগরিকত্বের তালিকা প্রকাশ করে স্বীকৃতি দিয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ বাসিন্দাকে। কিন্তু সেই রাজ্যে বসবাসরত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাঙালিকে চূড়ান্ত নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে তারা। এর ফলে এসব নাগরিক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে কূটনীতিক বিশ্লেষকরা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে শনিবার (৩১ আগস্ট) জানান, আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত বলছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ততক্ষণ সরকারেরও কিছুই করার নেই। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, কারণ এটিকে বোঝা হিসেবে বাংলাদেশের ঘাড়ে ফেলার চেষ্টা হতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়ে গেছেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সে কথায় আস্থা রাখতে হবে। আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে।

কিন্তু ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রায়ই তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে ঢুকে পড়ে জাতীয় নিরাপত্তা নষ্ট করছে এবং এদের ঠেকানোর জন্যই নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ তিনি এও বলেছেন, ‘বাংলাদেশিদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

এ সম্পর্কে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক বিশ্লেষক মো. তৌহিদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ভারতের চূড়ান্ত নাগরিকত্বের তালিকা থেকে প্রায় ১৯ লাখ বাসিন্দাকে বাদ দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই বলে যাচ্ছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যতক্ষণ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে, ততক্ষণ ভালো কথা। কিন্তু এ বাদ দেওয়া লোকগুলো কোথাকার?’

তিনি বলেন, ‘ভারত যদি বলে থাকে, এ মানুষগুলো বাংলাদেশের, তাহলে আমাদের তো এ বিষয়টা নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ এসে বলে গেলেন, এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্বেগ হল ভারত বাদ দেওয়া এ নাগরিকদের বিদেশি বলে অভিহিত করছে। তাহলে প্রশ্ন হল- এ মানুষগুলো তো আমেরিকা থেকে উড়ে আসেনি। ভারতের দাবি অনুযায়ী, তারা অবশ্যই পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে এসেছে। শেষ পর্যন্ত ভারত তাদের বাংলাদেশের ঘাড়ে ফেলার চেষ্টা করবে। অমিত শাহ এর আগে বলেছেন, ‘বাংলাদেশিদের খুঁজে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

আরো পড়ুন: আসামে রাষ্ট্রহীন ১৯ লাখ বাঙালি

সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেন, ‘সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত বলছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ততক্ষণ সরকারেরও কিছুই করার নেই। তবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। যাতে তাদের বোঝা হিসেবে বাংলাদেশের ঘাড়ে ফেলে দিতে না পারে।’

‘এ ঘটনার পর আসামে নাগরিক ও নাগরিকত্বহীন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কেউ যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে এমনিতেই সঙ্কটে রয়েছি। আরো ২০ লাখ মানুষের ভার আমরা সইতে পারব না,’ যোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘২০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফরে এসে স্পষ্ট করে গেছেন, জাতীয় নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের উদ্বিঘ্ন হওয়ার কারণ নেই। সে হিসেবে ১৯ লাখ মানুষকে যে তারা নাগরিকত্ব দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। তাহলে এ ১৯ লাখ মানুষ নিয়ে কি হবে? হিসেব অনুযায়ী ১১ লাখ হিন্দু এবং ৮ লাখ মুসলিম এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বিজেপি এর আগে অনেক জায়গায় বলেছে, হিন্দু যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাদের তারা নাগরিকত্ব দেবে। এ হিসেবে আমি ধরতে পারি সঙ্কটটা ৮ লাখে এসে দাঁড়াবে। তাহলে সমাধান কি হতে পারে? ভারতে বিভিন্ন আলোচনায় আমরা শুনেছি, বাদ পড়া লোকদের তারা ওয়ার্ক পারমিট দেবে, কিন্তু ভোটাধিকার থাকবে না। এমন পদক্ষেপ নিলে যারা বছরের পর বছর ভারতে আছে, তারা এটা মেনে নেবে কিনা বা ভারতের সুপ্রিমকোর্ট, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থাগুলো মেনে নেবে কিনা আমার জানা নেই। ভারত বিশ্বের একটা বড় গণতন্ত্রিক দেশ যেখানে নিয়মিত নির্বাচন হয়। তাদের সুপ্রিমকোর্ট, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থাগুলোই এ সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশের আগ বাড়িয়ে কিছু করার নেই। যখনই আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাব, তখন বাংলাদেশে ভারতবিরোধী শক্তি অস্থীতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়ে যাবে। জেনে শুনে এটা করতে দেওয়া ঠিক হবে না। ভারতও চাইবে না, এখানে ভারতবিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠুক। তাই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়ে গেছেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সে কথায় আস্থা রাখতে হবে। আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর