স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই উন্মুক্ত হবে মেট্রোরেল

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 20:03:14

ঢাকায় যানজট কমাতে এবং যাত্রীদের দ্রুত চলাচলের জন্য উত্তরা থেকে মিরপুর, ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রকল্প মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। আর পূর্ত কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাই মাসে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, ওই সময় এই অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের।  তবে, সে অবস্থান থেকে সরে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের পুরো অংশটিই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে কাজ করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ করা কিছুটা সহজ হওয়ায় আগেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্টেশনগুলো নির্মাণের কাজ চলছে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্টিলের স্প্যান তৈরির কাজ চলায় সেখানে কিছু জায়গা ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। তবে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের কাজ শেষ হলে সরাসরি স্প্যানগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় সহজেই স্থাপন করা যাবে। দ্রুত কাজ এগিয়ে যাওয়ায় উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হতে পারে। তবে সরকার বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে ট্রায়ালভাবে ট্রেন চলবে। ট্রেনগুলো নিয়মিত জাপানি কনসালটেন্টরা চালাতে থাকবেন। আর প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও তারা আরও দুই বছর ট্রেন পরিচালনা করবেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের যারা এই ট্রেন চালাতে প্রশিক্ষিত হবেন, তারাও জাপানের কনসালটেন্টদের সঙ্গে কাজ করবেন। পরে ধীরে ধীরে এটি বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ভায়াডাক্ট (পিলারের ওপর ছাদসদৃশ) ও কয়েকটি স্টেশন নির্মাণের জন্য চেক বোরিং টেস্ট পাইল ও মূল পাইল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এই এলাকায় পিলার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ, এখন স্প্যান বসছে। সব মিলিয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। আর আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, পল্টন অঞ্চলের কাজ পুরোদমে চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মেট্রোরেলের পূর্ত কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষ হবে। কিন্তু পূর্ত কাজের পর তার উপর বৈদ্যুতিক লাইন বসানো, ট্রেন আনা, ট্রেন সেট করাসহ বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এটি পরিচালনার জন্য অপরারেশন ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করতে হয়। এসব কাজ শেষ করে দ্রুতই ট্রায়ালভাবে ট্রেন চালানো যাবে।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পূর্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এমআরটি- ৬ এর সম্পূর্ণ অংশ একত্রে চালুর জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জনের কোন অসুবিধা হবে না। আমাদের অনুমোদিত ডিপিপিতে বলা আছে, ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে হবে। প্রায় তিন বছর আগেই এই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখানে ধীরগতি হওয়ার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনটিই যাচ্ছে না।

কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমার কাছে যে রিপোর্ট আছে, সে অনুযায়ী প্রথম ভাগে আমাদের যে কাজ করার কথা ছিল তার ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যে কাজ করার কথা ছিল তার প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর তৃতীয় ধাপের কাজের ২০ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল পথে ৭৭০টি স্প্যান বসবে। এ রেলপথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এ পথে ১৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেন এক হাজার ৬৯৬ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। এর মধ্যে ৯৪২ জন বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।

উল্লেখ্য, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন মেট্রোরেল ৩৭ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছবে। প্রতি চার মিনিট অন্তর ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর