‘সাগর মহাসাগর হল মানবজাতির জন্য অবারিত সম্পদ ও অপার সম্ভাবনার উৎস। এর অনেকটাই এখন অনাবিষ্কৃত রয়েছে। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্প বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখছে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর ) তৃতীয় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) ব্লু-ইকোনমি মিনিস্টারিয়েল কনফারেন্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
সকাল ১০টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন শুরু হয়।
আরও পড়ুন: সাগর মহাসাগর হল অপার সম্ভাবনার উৎস
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়। এজন্য সমুদ্র সংরক্ষণ নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে মহাসাগর ও বিপুল সম্পদ সংরক্ষণে আমরা যত বেশী বিনিয়োগ করব, যত বেশি পদক্ষেপ নেব তা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি মানুষ্য সৃষ্ট সমস্যার কারণে আমাদের সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল নিঃসরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা দূষণ, শব্দ দূষণ এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন এসবের অন্যতম কারণ। এর ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে আইওআরএ সদস্যভুক্ত দেশগুলো সুনামি ও সাইক্লোন এর ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম খোরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছে। এটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
তিনি এ অ্যাসোসিয়েশনে একে অন্যকে সহযোগিতা করার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা সকলে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হব এবং নিয়ম মেনে চললে সমুদ্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক প্রতিবছর সমুদ্রে মিশছে। এসব সমুদ্রের প্রাণিদের ভেতর ঢুকছে। পরবর্তীতে তা মানব শরীরের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
সাউথ আফ্রিকার পরিবেশ বন ও মৎস্যমন্ত্রী মাখোত্সু মাগদিলিন-সাথিউ বলেন, স্থায়ী উন্নতি বজায় রাখতে হলে ভারত মহাসাগরে শান্তি রক্ষা করতে হবে। এ বিশাল সমুদ্রে যে কোনো প্রকার সংঘর্ষ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাধা হতে পারে।
আইওআরএ’র সেক্রেটারি জেনারেল রাষ্ট্রদূত ড. নমভোয় এন নকওয়ে বলেন, সমুদ্র সম্পদের অবিবেচক ব্যবহারের ফলে মানবজাতির জন্য হুমকি বয়ে আনছে। এ বিষয়ে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভারত মহাসাগরের জলস্তরের উচ্চতা বাড়ছে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয় হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির সেক্রেটারি জেনারেল মাইকেল ডব্লুও লজ বলেন, মহাসাগর থেকে সম্পদ উত্তোলনে আগে সেখানকার সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকা খুবই দরকার। শুধু অর্থনৈতিক চিন্তা না করে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সমুহ জ্ঞান থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও নারী বিষয়ক মন্ত্রী মেরিস পেইন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিলক মারাপানা, সিসিলির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরি ফর, কেনিয়ার কৃষি ও মৎস্যমন্ত্রী মাওয়াংগী কিউনজুরি, মরিশাসের সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী প্রেমদূত কুঞ্জ, মাদাগাস্কারের কৃষিমন্ত্রী রানা রিভেলো ফানোমেজানসোয়া-লুসিয়ান, মালদ্বীপের মেরিন রিসোর্স অ্যান্ড এগ্রিকালচার মিনিস্টার হাসান রশিদ, সাউথ আফ্রিকার পরিবেশ বন ও মৎস্যমন্ত্রী মাখোত্সু মাগদিলিন-সাথিউ, সোমালিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্দুল কাদির আহমেদ খায়ের আবদি, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা (ডেপুটি মিনিস্টার) পর্নপিমল কাঞ্চানালাক, কমোরসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাউফ মোহাম্মেদ আল আমিন প্রমুখ এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
ভারত মহাসাগরীয় জোট আইওআরএ’র তৃতীয় এ সম্মেলনে অংশ নিতে বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন।
আইওআরএর সদস্য দেশ হলো- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কোমোরোস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মোজাম্বিক, ওমান, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।