নারীর কাছে ‘গণপরিবহন’ অস্বস্তির আরেক নাম

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম , স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-12-21 20:39:21

দৌড়ে চলন্ত বাসে ওঠা, ভিড়ের মাঝে পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠেলাঠেলি করে বাসে ওঠা, পুরুষ যাত্রীদের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ানো, হঠাৎ ঝাঁকুনির সুযোগ নিয়ে পুরুষ যাত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা,  আবার পুরুষ যাত্রীদের ঠেলে ঠেলে বাস থেকে নামা, নামার সময় হেলপার কর্তৃক ‘তাড়াতাড়ি নামেন তাড়াতাড়ি, এজন্য মহিলা মানুষ ওঠাই নাই’- এমন বক্তব্য শোনা।

 

উপরের চিত্রগুলো কর্মমুখীর নারীর গণপরিবহনের ওঠার নিত্যদিনের চিত্র। রাজধানীর গণপরিবহন মানেই নারী পুরুষ সবার জন্যই ভোগান্তি। তবে নারীদের জন্য গণপরিবহন যেন-অস্বস্তি, হয়রানি এবং বিভৎস অভিজ্ঞতার অপর নাম।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। বিআরটিসি বাস এক হাজার ৪৪৫টি, এর মধ্যে নারীদের জন্য রয়েছে ১৭টি বাস। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

২০০৮ সালে, ভোগান্তি কমাতে ঢাকা মহানগর পরিবহন কমিটি মিনিবাসে ৬ টি বড় বাসে ৯ টি এবং বিআরটিসি'র বাসে ১৩ টি আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানিয়েছিল।যদিও বাস্তবে তা বাসের ভেতরে সিটের ওপর ‘নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ৯টি আসন’-লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট, বাংলামটর, কারওযান বাজার, শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে নারীরা যেন গণপরিবহনে উঠতে এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমেছেন। পরিবহন সংকটের এই রাজধানীতে কর্মব্যস্ত নারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করছেন পুরুষদের সঙ্গে। কিন্তু, বাসের ওঠার সময় পিছিয়ে পড়ছেন। কেউ পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিড়ের মধ্যে উঠলেও কেউ কেউ অস্বস্তি, লজ্জায় পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।

আবার যুদ্ধ জয় করে বাসের ওঠে পর অনেকেই দেখেন, বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসে আছেন কোনো পুরুষ যাত্রী।

বেসরকারি চাকরিজীবী হাসনা হেনা বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'নারীদের এগিয়ে যেতে নিয়মিতই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যুদ্ধের অন্যতম ক্ষেত্র হল গণপরিবহন। সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ হলো গণপরিবহনে ওঠা। কষ্ট করে উঠতে পারলেও দেখা যাবে নির্ধারিত সিটে পুরুষ বসে আছেন।

অফিসগামী আরেক নারী যাত্রী মাহাবুবা বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'অফিস টাইমে বিশেষ করে সকালে এবং অফিস থেকে ফেরার পথে এই দুই সময় বেশি ভোগান্তি হয়। আমাদের জন্য বিআরটিসি'র যে মহিলা বাস আছে সেগুলো চাহিদার তুলনায় কম। ফলে বাধ্য হয়ে বেসরকারি গণপরিবহনে উঠতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, মহিলা বলে হেলাপাররা নিতে চান না। বাসের মধ্যে হেনস্থা হওয়ার ঘটনা তো আছেই’।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইডের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, 'প্রায় ৮৪ শতাংশ নারী যাত্রীই গণপরিবহনে কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়।ফলে বেশিরভাগ নারী যাত্রীরা চলাচলে জন্য বিকল্প কোনো বাহন বেছে নেন'।

রুনা খন্দকার নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'গণপরিবহনে নারীদের দুর্ভোগ কমাতে হলে নারী বান্ধব গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে নারীদের জন্য আলাদা বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নির্ধারিত সিটগুলো সংরক্ষণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া পুরুষ সহযাত্রীরা যদি সচেতন হন তাহলেও দুর্ভোগ, হয়রানি কিছুটা কমবে'।

এ প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি বাসের ড্রাইভার, হেলপার ও পুরুষ যাত্রীদের মানবিক আচরণ করতে হবে নারী যাত্রীদের প্রতি'।

এ সম্পর্কিত আরও খবর