ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে ডিএনসিসি মেয়রের ৩০৫৭ কোটির বাজেট

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 04:11:06

মেয়র হিসেবে চলতি মেয়াদের শেষ এবং মেয়র হিসেবে প্রথম বাজেট দিয়েছেন মো. আতিকুল ইসলাম।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) তিন হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন হয়েছে। বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিয়ন্ত্রণ খাতে। চলতি অর্থ বছরে ১৮২ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন খাতে ১২৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণ খাতে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে মশা মারার ওষুধ কিনতে খরচ ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। আর কচুরিপানা /আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে খরচ ধরা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা, ফগার হুইল স্প্রে মেশিন বাবদ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিশেষ কর্মসূচিতে এক কোটি টাকা, আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে বিভিন্ন নাম দিয়ে মোট ১২৬ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি, আর ল্যান্ডফিল রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন ব্যয় ১০ কোটি, সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন পাঁচ কোটি, বর্জ্য বিভাগের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও কেনায় ২০ কোটি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাক-মোটরসাইকেল কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।

বাজেটে ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিশ্রমিক ও ভাতা বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, আতিথেয়তা ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি, উৎসব (জাতীয় উৎসব ও নাগরিক সংবর্ধনা) ২৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিরাপদ ও গতিময় শহর গড়তে কাজ করছি। নিরাপদ শহর গড়া, সর্বত্র আলোকিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। ডিএনসিসির সব এলাকায় এলইডি বাতি জ্বলবে। সেজন্য আমরা আগামী বছরের শুরু থেকে পুরো ডিএনসিসি এলাকায় ৪২ হাজার ৪৫০টি এলইডি বাতি স্থাপনে ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।’

মেয়র আতিকের বাজেট বক্তৃতায় শুধু স্বপ্নের ফুলঝুড়ি। মেয়র হিসেবে আতিকের মেয়াদ আছে ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত। তবে আইন অনুযায়ী এর পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হয়। বাজেট বইতে ১১টি প্রকল্পের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যে প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাত্র দু’টি তার চলমান মেয়াদের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি নয়টি প্রকল্পই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়।

যেসব প্রকল্পের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, তার অধিকাংশই মেয়র হিসেবে এ মেয়াদে শেষ করা অসম্ভব বলে পর্যালোচনায় দেখা গেছে। ঢাকা শহরের মহাখালী, যাত্রবাড়ী ও আমিনবাজারে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা, কিন্তু সমাপ্ত হওয়ার সময় উল্লেখ করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর। এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পও শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, অর্থাৎ মেয়রের চলতি মেয়াদ শেষে।

অন্যদিকে, ৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্টের মেয়াদও শেষ হওয়ার সময়সীমা ২০২০ সালের জুন মাসে। ডিএনসিসির সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৬২ লাখ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে।

মেয়র বলেন, ‘আমরা বিশেষ কোনো এলাকার নয়, পুরো ডিএনসিসির সার্বিক উন্নয়ন করতে চাই। সেজন্য এবার মিরপুর, বনশ্রীকে ঘিরে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ অভিযান চালু করা হবে। ফুটপাতের কোথাও কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না বলেও জানান আতিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই, সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. মঞ্জুর হোসেন, কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, আলেয়া সারোয়ার ডেইজীসহ অনেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর