খুলনায় জলাবদ্ধতা: ৮৪৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে ধীরগতি

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা | 2023-09-01 23:12:47

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৮৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের ৮ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনও এ প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। সম্পন্ন হয়নি কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া।

কেসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কনসালটেন্ট নিয়োগ শেষ হলে টেন্ডারের আহ্বান করা হবে।

বার্তা২৪
সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকাগুলোতে পানি জমে যায়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে নগরবাসী। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ময়ূর নদীসহ ১২টি খাল খনন করা হয়। খনন কাজে অনিয়মসহ নানা কারণে দুই বছরের মধ্যে ময়ূর নদী ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে এখন হাঁটুপানি জমে যায়। সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে ২২টি খাল পুনঃখনন করে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণের পরবর্তী সময়ে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কেসিসি’র প্রকৌশল বিভাগকে নতুন প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দেন মেয়র। নির্দেশনা অনুযায়ী ৮৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়।

বার্তা২৪
সামান্য বৃষ্টি হলেই মূল সড়কে পানি জমে যায়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

এ প্রকল্পের মূল অংশে রয়েছে, ৯টি প্রধান সড়কের ৬২ কিলোমিটার এলাকায় প্রাইমারি ড্রেন নির্মাণ। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে সেকেন্ডারি ড্রেন (৩ ফুটের কম) নির্মাণ করা হবে প্রায় ১২৮ কিলোমিটার। প্রধান ড্রেনগুলোর মধ্যে মুজগুন্নী মহাসড়কের উভয় পাশে ফুটপাতসহ দুই পাশে ৮ কিলোমিটার ড্রেন, যশোর রোডের ডাকবাংলো মোড় থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, খানজাহান আলী রোডের পিটিআই মোড় থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, একই সড়কের ফেরিঘাট বাস টার্মিনাল থেকে ক্যাসেল সালাম হোটেল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ড্রেন, আপার যশোর রোডের পিকচার প্যালেস মোড় থেকে ১ নম্বর কাস্টমঘাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ।

এ ছাড়া ময়ূর নদীসহ ৮টি খাল খনন ও পাড় বাঁধাই করা হবে। খালগুলো হচ্ছে ক্ষেত্রখালী খাল, ছড়িছড়া খাল, হরিণটানা খাল, নারকেলবাড়িয়া খাল, তালতলা খাল, নার্সি ইনস্টিটিউট থেকে ময়ূর নদী পর্যন্ত খাল, তালতলা খাল, লবণচরা ২নং স্লুইস গেট খাল। পাশাপাশি রূপসা বেড়িবাঁধ, মতিয়াখালী খাল, পোর্ট কলোনি থেকে ভৈরব নদ, লবণচরা স্লুইস গেট-১ ও ২, রায়ের মহল স্লুইস গেট স্থানান্তর ও নির্মাণ, রূপসা পাইকারি মাছ বাজার, প্রান্তিক খালের আউটলেট থেকে ময়ূর নদী ও চরের হাটে নতুন স্লুইস গেট নির্মাণ, আউটলেট খনন ও বাঁধাই।

বার্তা২৪
বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন খেটে খাওয়া মানুষরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

খুলনার নগরবাসীরা জানান, নগরীতে সামান্য বর্ষাতেই ডুবে যায় সর্বত্র। বর্ষায় নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় নগরবাসীকে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। বর্ষণে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর প্রধান সড়ক, ফুটপাত ও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলো। বর্ষা মৌসুমের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি জলাবদ্ধতা।

সর্বশেষ কিছুদিন আগে খুলনায় ১১৪ মিলিমিটার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টিপাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলি, বাড়ি-ঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়। বাস্তুহারা এলাকায় ৫ দিন পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত ছিল। তাই জনভোগান্তি কমাতে গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী।

বার্তা২৪
জমে থাকা পানিতে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

 

মেগা প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে একনেকে এ প্রকল্প চূড়ান্ত হলেও ডিপিপি হয়ে আসতে সময় লাগে। যে কারণে কনসালটেন্ট নিয়োগ ও টেন্ডার আহ্বানে বিলম্ব হচ্ছে। প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সামনের কয়েকদিনের মধ্যেই এ নিয়োগ শেষ হবে। কনসাল্টেন্ট নিয়োগ শেষ হলে টেন্ডারের আহ্বান করা হবে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১৭ কোটির টাকার কাজ করা হবে। বাকি কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে।’

মেগা এ প্রকল্পের প্রধান পলাশ কান্তি বালাকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর