রেলওয়ে কলোনি বস্তি ঘিরে ছিল মাদকের রমরমা ব্যবসা

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 03:57:10

বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারীদের আবাসনের জন্য রাজধানীর শাহজাহানপুরে গড়ে উঠে ‘রেলওয়ে কলোনি’। ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা কলোনিতে চারতলা ভবন রয়েছে ১০৮ টি। যা রেলওয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আড়াই হাজার চাকরিজীবী পরিবারের নামে বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে।

কিন্তু ২৫ একর জায়গার রেলওয়ে কলোনি দিনে দিনে সংকুচিত হতে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিকদের দখলে গড়ে উঠে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। প্রথমে ক্লাব ঘর দিয়ে অবৈধ দখল শুরু হলেও শেষে বস্তিতে পরিণত হয় কলোনি। আর এই অবৈধ দখলের মাধ্যমেই কলোনিতে শুরু হয় মাদকের রমরমা ব্যবসা।

রেলওয়ে কলোনির স্থায়ী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০-১২ বছর আগে তিনটি ক্লাব ঘর তৈরির মাধ্যমে অবৈধ দখল শুরু হয় কলোনিতে। এর পর গড়ে উঠে রিকশা গ্যারেজ ও বিভিন্ন দোকান। সর্বশেষে গড়ে উঠে এক হাজার ঘরের বিশাল বস্তি। বস্তিতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে কলোনির সরকারি ভবন থেকে।

স্থানীয়রা আরও জানান, বহিরাগতদের আগমনে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এক প্রকার বন্দী হয়ে পড়েন কলোনিতে। ছেলে মেয়েরা বখাটেদের উৎপাতে যেতে পারতেন না স্কুল-কলেজে। এছাড়া তিনটি ক্লাব ঘর ও বস্তিতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জমতো মাদকের আসর। গাঁজা, মদ ও ইয়াবা থেকে শুরু করে নানা রকম মাদকের ব্যবসাও চলতো।

কলোনির বাসিন্দারা মাদক ব্যবসার বিষয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ক্যাডাররা দলবল নিয়ে একাধিকবার মারধর করেছেন কলোনির বাসিন্দাদের। এর পর থেকে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেননি।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অবৈধ বস্তি কিভাবে গড়ে উঠছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে কলোনির স্থানীয় বাসিন্দারা এসব কথা বলেন।

রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তা মজিদুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, অবৈধ এই বস্তিতে শুধুমাত্র বহিরাগতরাই থাকতো না। বস্তি ও ক্লাব ঘরে নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের। সারা দিন কলোনিতে মাদক সেবীরা আসত মাদক কেনার জন্য। বিশেষ বিশেষ জায়গায় চলত মাদক সেবনের আসরও।

রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও কলোনির বাসিন্দা মো.স্বপন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর কেউ বিল্ডিং এর বাইরে যেতে চাইতো না। প্রতিদিন ক্লাব ঘরগুলোতে চলত মাদক সেবন। ইয়াবা, গাজা ও মদসহ নানা মাদকের ব্যবসা ছিল কলোনিতে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বস্তিতে এ মাদক ব্যবসা করতো। তবে এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে বস্তি। আশা করি, এ অবস্থা আর থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল হক বলেন, এমন কিছু অভিযোগ আমরাও শুনেছি। কিন্তু কলোনি থেকে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেনি মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে। এখন অবৈধ উচ্ছেদ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এখানে যেন বহিরাগতরা না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। 

অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়ে রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। প্রথম ধাপে চার দিন চলবে এ অভিযান। অভিযান শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর