মক্কায় হাজীরা যার ‘মেহমান’

, জাতীয়

 জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 17:55:56

সৌদি আরব থেকে: ওমরাহ বা হজ্ব করতে আসা বাংলাদেশিরা আমার কাছে মেহমান। ব্যবসা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে হাজীদের ‘খেদমত’ করার বিষয়টিই আমার কাছে সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার। এই নীতি আর আদর্শই আমাকে এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই বলছিলেন পবিত্র নগরী মক্কায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চৌধুরী।

কাবা ঘরকে ঘিরে গোটা পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মিলনমেলা বসে এই নগরীতে। এখনকার বিখ্যাত মসজিদ ‘আল হারামের’ কাছে গ্র্যান্ড মক্কা হোটেলের পেছনে সেবা আমির জবলে সউদান এলাকায় জসীম উদ্দিন গড়ে তুলেছেন ‘ঢাকা হোটেল এন্ড বিরিয়ানী হাউজ" নামের বিশাল এক রেস্টুরেন্ট।

রেস্টুরেন্টে বছর জুড়েই লেগে থাকে ব্যস্ততা। রমজান মাস আর হজ্বের মওসুম এলে তো কথাই নেই, তা বেড়ে যায় বহুগুণে। রমজান মাসের শেষ দশদিন না‘জাতের। বছরের এ সময়টাতে বিশ্বের নানা দেশ থেকে ওমরাহ'র উদ্দেশে লাখো মানুষ আসে মক্কায়। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মক্কা নগরী।

এমন ভিড়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটাও কম নয়। তাদের আগমনে "ঢাকা হোটেল এন্ড বিরিয়ানী হাউজ" যেন হয়ে ওঠে এক খন্ড ‘বাংলাদেশ’। 

বিদেশ ভুঁইয়ে আসা এমন বাংলাদেশিদের পাতে দেশি খাবার তুলে দিতেই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ঢাকা হোটেল এন্ড বিরিয়ানী হাউজের স্বত্বাধিকারী জসীম উদ্দিনের।

চট্রগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার চুড়ামনি গ্রামের আলহাজ্ব কবির আহমেদ চৌধুরীর ছেলে জসীম। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বছর বিশেক আগে পাড়ি জমান মক্কায়। তখন তার ভরসা বলতে ছিলো বড়ভাই। এখন জসীমসহ পাঁচ ভাই জমিয়ে ব্যবসা করছেন মক্কায়।

জসীম প্রবাস জীবনে পা রেখেই যুক্ত হন ব্যবসায়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তার।

প্রতিদিন আড়াই থেকে প্রায় ৩ মণ গরুর মাংস বিক্রি হয় তার হোটেলে। এর বাইরে থাকে দেশ থেকে আসা ইলিশ,রুই,কাচকিসহ রকমারি স্বাদের মাছ তো রয়েছেই।

মক্কায় দেশি খাবারের স্বাদ নিতে হলে প্রতি বেলায় গুণতে হয় ১৫ থেকে ২০ রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩শ'থেকে ৪শ' টাকা। তবে জসীম উদ্দিন চৌধুরীর হিসেবটা অন্যদের থেকে ভিন্ন। তিনি আসছে হজ্ব মওসুমে হাজীদের মাত্র ২০ রিয়ালেই তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।

জসীম জানালেন, গতবার ২০ হাজার বাংলাদেশি হাজীর খাবার সরবরাহ করেছি। এবার লক্ষ্য আরো বেশি। আমাদের হোটেলের সব মাছই আসে বাংলাদেশ থেকে। সে অর্থে দেশ থেকে আমদানী করা মাছের বদৌলতে রপ্তানির চাকা যেমন ঘুরছে, তেমনি ২৫ জনের কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে আমরাও ভূমিকা রাখছি।

তবে আমাদের এই ভূমিকাকে আরো বেশি করে উৎসাহ দিলে দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানান তিনি।

জসীম উদ্দিন মনে করেন, প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে সরকার দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের সন্মানিত করতে পারে। সেই সন্মান এক ধরনের স্বীকৃতিও। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। তবেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা যেমন বাড়বে,তেমনি বিনিয়োগও বাড়বে।

এছাড়া প্রবাসীদের দেশে পাঠানো অর্থ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ও ভূমিকা বিবেচনায় সিআইপি কার্ড প্রদানের দাবীও করেন। এটা প্রবাসী ব্যবসায়ীদের মর্যাদাকে যেমন বাড়িয়ে দেবে, তেমনি দেশকেও সমৃদ্ধ করবে- যোগ করেন  প্রবাসী ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন চৌধুরী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর