পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে সঙ্গে চলছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। এখন পর্যন্ত রেল সংযোগ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এ দিকে মূল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) উপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের অংশে থাকবে একটি রেলপথ। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়ে বলেন, পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। সেতুর কাজের জন্য গার্ডারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইতিমধ্যে চলে এসেছে। প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় সাইট অফিস করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা চীন সরকার ঋণ দেবে এবং বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০১৮ সালের দিকে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় যে সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে—ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং এবং ৩ কিলোমিটার ডাবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ৬টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার বেজ রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহের কাজ।
রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পেও নকশা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। সেতুর নকশা জটিলতা কেটে গেছে। এখন কাজ চলছে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে নতুন করে আর ব্যয় বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কাজ যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলছে। সময়মতো কাজটি শেষ করতে পারব। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে। দুই ধাপে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ও দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মিত হবে। এর মধ্যে প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত।
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, পদ্মা মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি অনেক এগিয়ে গেছে। তবে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে থাকার কারণ হলো প্রকল্পের মূল কাজ আমরা শুরু করতে পেরেছি ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে। আমরা আশা করছি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনই সেতুর উপর দিয়ে চলবে ট্রেন।