রাস্তা চওড়া করতে ২ হাজার গাছ কাটার মহোৎসব!

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 19:23:35

রাজশাহীতে ৩৫ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে এ গাছ কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন শ্রমিক মাসব্যাপী গাছ কাটার কথিত ‘উৎসবে’ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি গাছ কেটে সাবাড় করেছেন। আরও এক সপ্তাহব্যাপী চলবে গাছ কাটার এ ‘উৎসব’। যা নিয়ে পরিবেশ আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, গণহারে এমন গাছ কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা নেয়নি রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান বৃক্ষপালনবিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে সার্ভেমূল্য তালিকা অনুযায়ী গাছগুলোর দাম ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সাত বছর আগের মূল্যে এসব গাছ বিক্রি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে কাকনহাট হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সড়কটি মাত্র কয়েক ফুট চাওড়া করতে দু’ধারে থাকা মূল্যবান গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের দেড় হাজার গাছ কাটা হয়ে গেছে। বাকি প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে থাকা আরও পাঁচ শতাধিক গাছ কর্তনের প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহে শেষ হবে।

সড়ক প্রশস্তকরণের নামে কাটা হচ্ছে গাছ

 

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছাড়াও এসব গাছের মালিকানা রয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), সামাজিক বন বিভাগ ও রাজশাহী জেলা পরিষদের। এর মধ্যে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ কেটেছে ৭৯০টি আর সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেটে নিয়েছে ৬৬৩টি গাছ।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুন্ডু বলেন, ‘সড়কের গাছ কাটার আগে যাদের সম্ভাব্য মালিকানা থাকতে পারে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করা হয়। গাছের বিপরীতে যারা প্রমাণ হাজির করতে পেরেছেন তারা গাছ পেয়েছেন। বন বিভাগ বলেছে তাদের গাছ নেই। পবা উপজেলা এলজিইডিও জানিয়েছে- গাছে তাদের অংশীদারিত্ব নেই। এখানে বিএমডিএ ও জেলা পরিষদের গাছ রয়েছে। তাদেরকে গাছ কেটে নিতে বলা হয়েছে।’

পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যা, এটা সত্য পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আমরা নিইনি। তবে তাদেরকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। সড়ক চাওড়া করতে গাছগুলো কাটতেই হতো। তাই বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সড়ক প্রশস্তকরণের পর আমরা সড়কের দু’ধারে নতুন করে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগে নেব।’

এদিকে, উন্নয়নের অজুহাতে বৃক্ষ নিধন করে লাভবান হতে এক শ্রেণির কর্মকর্তা সব সময় তৎপর-এমন অভিযোগ করে পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহীর সভাপতি মো. জামাত খান।

তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন বিরোধী নই। প্রধানমন্ত্রীও গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এরপর নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছেই। এভাবে গাছ কাটা অব্যাহত রাখলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর