বেকারদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ব্লাকবেবী তরমুজ 

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 00:41:53

মেহেরপুর জেলায় প্রথম আবাদকৃত ব্লাকবেবী তরমুজের উত্তোলন করা হয়েছে। প্রথম আবাদেই চাষির হাতে ধরা দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। বিঘা প্রতি এক লাখের বেশি টাকা আয় করেছেন কৃষক সাইদুর রহমান লিজন। উচ্চমূল্যের এই ফসল চাষে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনায় জেলার বেকার যুবকদের মাঝে এক নুতন স্বপ্ন দেখা দিয়েছে। 
 
জানা গেছে, সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের সাইদুর রহমান লিজন গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করেন। তাইওয়ানের ব্লাকবেবী জাতের এই তরমুজ আবাদের বিষয়টি ইউটিউব ঘেটে বের করেন লিজন। মাত্র ৬৫ দিনে ফলন প্রাপ্তির আশা নিয়ে শুরু হয় পরিচর্যা। শেষ পর্যন্ত ৬৬ দিনের মাথায় মঙ্গলবার (০৭ জুন) ক্ষেত থেকে তরমুজ উত্তোলন করতে সক্ষম হন। বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় দেড়শ মণ। ঢাকার কাওরান বাজারের সবজি আড়তে বিক্রি করা হয়েছে। 
 
তরমুজের আকার ভেদে ৫০, ৪০ ও ৩৫ টাকা করে কেজি বিক্রি করেছেন লিজন। বিঘা প্রতি খরচ ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিঘায় লাভ হয়েছে এক লাখ টাকার উপরে। 
 
এ প্রসঙ্গে তরমুজ চাষি সাইদুর রহমান লিজন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে আমি কোরিয়া থেকে দেশে ফিরে কিছু একটা করার চিন্তা করছিলাম। উচ্চমূল্যের কোনো ফসল আবাদ করার নেশা নিয়ে ইউটিউব ঘাটাঘাটি শুরু করি। এক পর্যায়ে তাইওয়ানের ব্লাকবেবী (আকারে ছোট ও কাল রঙয়ের) তরমুজের লাভের বিষয়টি নজরে পড়ে। খোঁজ পাই চুয়াডাঙ্গার সুবদিয়া এলাকায় এ তরমুজের চাষ হয়। সেখানে যোগাযোগ করে চাষি ও কৃষি অফিসারদের সাথে পরামর্শ নিয়ে বীজ সংগ্রহ করি। চাষের বড় ধরনের আর্থিক বিনিয়োগ ঝুঁকি জেনেও পিছপা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি সফল হয়েছি।’
 
আবাদের খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় চাষ দিয়ে মাটি তৈরির পর বেড করা হয়। গাছের খাবার ও আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য মালচিং পেপার দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছিল বেড। পরে মাচা তৈরি করে তাতে তরমুজ গাছ উঠিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হয়েছে। এর বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গাছে তরমুজ ধরে রাখা। বোটা নরম তাই নেট ব্যাগ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বীজ বপণ থেকে শুরু করে ফল উত্তোলন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধাপে ব্যাপক খরচ করতে হয়েছে।’
 
এদিকে এলাকায় প্রথম আবাদকৃত ব্লাকবেবী তরমুজ দেখতে প্রতিদিনই ক্ষেতে ভিড় করছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। লিজনের সাফল্যে অনেকেই আজ স্বপ্ন দেখছেন তরমুজ আবাদে। 
 
গাড়াডোব গ্রামের বেকার যুবক আজিজুর রহমান ও কামাল হোসেন বলেন, ‘ব্লাকবেবী তরমুজে যে লাভ তাতে আমরা মনে করি বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। ৫-১০ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ না গিয়ে দেশেই আবাদের কাজে নেমে পড়া যায়। বিষয়টি আমাদের দারুণভাবে উৎসাহিত করছে।’
 
ব্লাকবেবী তরমুজ আবাদ সম্প্রসারণের বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে জেলা কৃষি বিভাগও। গাড়াডোব ব্লকের উপ সহকারী কৃষি অফিসার আশরাফুজ্জামান ওই ক্ষেতের নিয়মিত তদারকি করেছেন। জেলা ও উপজেলা কৃষি  কর্মকর্তারাও কয়েক দফা ক্ষেত পরিদর্শন করেন। 
 
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মাত্র ৬৫ দিনে এত লাভজনক কোনো ফসল আমাদের দেশে নেই। তরমুজ উত্তোলনের পর একই মাচায় লাউ আবাদ করা যাবে। এরপর বেগুন ও বেগুন উত্তোলনের পর তরমুজ আবাদ করা যাবে। একই জমিতে বছরে তিনটি ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে। তরমুজের মাচায় লাউ আবাদ করতে পারায় উৎপাদন খরচও কমবে। যা চাষিদের জন্য আরও লাভজনক।  
 
এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শীতকাল বাদে বছরের যেকোনো সময়ে ব্লাকবেবী তরমুজ আবাদ করা যায়। খেতে সু-স্বাদু তাই সহজেই ভোক্তাদের আকর্ষণ করবে। উচ্চমূল্যের এই তরমুজ আবাদে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। এ আবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে চাষিরা উপকৃত হবেন।’ 
 
 
 

এ সম্পর্কিত আরও খবর