‘জিতলে দেখা নাই, ভোট দিয়্যা কী হইবে?’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-25 16:44:15

রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রচারণায় তেমন সাড়া নেই ভোটারদের। প্রার্থীরাও খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন না। যেন ঢিলেঢালা প্রচারণাতেই পার হচ্ছে দিন।

এরই মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের আট দিন পেরিয়েছে। রংপুর নগর-সদর কোথাও নেই প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টারের সয়লাব চিত্র। লাঙ্গল, ধানের শীষ আর মোটরগাড়ি প্রতীকের তিন প্রার্থীর কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও অন্য তিনজনের পোস্টার নেই। ভোটের আগে উৎসবহীন অবস্থা দেখে ক্ষুদ্ধ জব্বার আলী।

রিকশা চালক জব্বার আলীর বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। রংপুর সদরের হরিদেবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে রংপুর মহানগরে চলে আসেন। সারাদিন ঘাম ঝরানো শ্রমের উপার্জন নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। রংপুর-৩ আসনের ভোট নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জব্বার আলী বলেন, ‘প্রতিবারই তো নাঙ্গলোত ভোট দিচি। এবার ভাবি চিন্তি না হয় ভোট দেমো। হামার গরিবের ভোট দিয়্যা কি হইবে? জিতলে তো দেখা নাই। একান সই নেবার জনতে রংপুর থাকি ঢাকা যাওয়া নাগে। জরুরি কামের সময় এমপি-মন্ত্রীরা হামার পাশোত আইসে না। খালি ভোটের সমায় ওমার দেখা মেলে।’

আক্ষেপের সুরে এ ভোটার বলেন, ‘দুই বছর আগোত বেটার চাকুরির সুপারিশের জনতে ঢাকাত পড়ি থাকি এরশাদ সাইবের সই স্বাক্ষর নিচি বাহে। অথচ সারাজীবন তাক ভোট দিয়্যা আইসোচি। কাজের সময় যদি বাড়ির গোরোত এমপি সাইব না থাকে, ভোটের সময় থাকি লাভ কি?’

saad
ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন সাদ এরশাদ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম 

 

জব্বার আলীর মতো রংপুরের অসংখ্য ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট নিয়ে ভাবেন না। কারণ তাদের কাছে ভোট উৎসবের রং বদলে গেছে। ফিকে হয়ে গেছে নির্বাচনের আমেজ। শুধু প্রার্থী আর নেতাকর্মীদের মধ্যেই এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবনা। সাধারণ ভোটাররা নিরব থাকলেও সচেতন মহলে চলছে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে নানা রকম বিশ্লেষণ।

অনেকই হতাশ উন্নয়নের বিপরীত স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা আগামীর রংপুর নিয়ে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন।

রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা এম এ মজিদ। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসা থেকে তার বাসার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এতো কাছাকাছি থেকে ভোটের উত্তাপ বা উৎসব কোনোটাই অনুভব করতে পারছেন না তিনি।

পঞ্চান্ন বছর বয়সী এ ভোটার বলেন, ‘এবার তো এরশাদ নেই। তার ছেলে সাদ এরশাদ আর তার ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার নির্বাচন করছেন। তারা দুইজন একই পরিবারের হলেও তাদের প্রতীক ভিন্ন। আসিফ শাহরিয়ার স্থানীয় ও সাবেক এমপি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সাদ এরশাদ অপরিচিত হলেও এরশাদের ছেলে হিসেবে এখন সবার কাছে পরিচিত। তবে শেষ পর্যন্ত কে জিতবেন তা বলা যাচ্ছে না।’

saad

এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে আসছে। ভোটারদের প্রত্যাশা থাকে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের এলাকাতে থাকুক। যেন প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ সংসদ সদস্যদের কাছে যেতে পারেন। কিন্তু এ প্রত্যাশার জায়গা এখনো কেউই পূরণ করতে পারেননি।’

উল্লেখ্য, রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য এ আসনে আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

রংপুর সদর ও সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনের মোট ভোটার চার লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এবারো এখানকার ১৭৫টি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেবেন ভোটাররা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর