মাত্র ৬শ' টাকায় ওমরাহ পালন!

, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 11:28:58

সৌদি আরব ( জেদ্দা) থেকে: বাংলাদেশী মুদ্রায় মাত্র ৬'শ টাকায় ওমরাহ্ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। কল্পনা নয়, বাস্তবেই। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে বাস বোঝাই করে মক্কায় আসেন প্রবাসীরা। তাদের বঞ্চনার জীবনে- এ যেন পরম পাওয়া।

খোদার ঘরে তাওয়াফ করে নিজেদের কাজে ফিরে যান শ্রমিকরা। নিয়ে যান বুক ভরা প্রশান্তি আর আত্নবিশ্বাস।প্রবাসীদের নিয়ে এই কাজটিই করেন আবুল কালাম। পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তবে স্বেচ্ছায় কাজটি করেও পার্থিব সুখ খোঁজেন তিনি।

আবুল কালাম ৩৮ বছরের জীবনে ২৩ বছর ধরে বাস করছেন মধ্য প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে। প্রায় দুই যুগের এই প্রবাসী জীবনে  বর্তমানে তার মজুরী দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার টাকার কিছু বেশী। বেতন ১ হাজার সৌদি রিয়াল। বর্তমান বাজার দর অনুয়ারী এক রিয়ালের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রার মূল্যমান ২২ টাকা ৩৫ পয়সা।

ঢাকার সাভারের বড়ওয়ালিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আবুল কালাম।দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ভাগ্য অন্বেষণে ২৩ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে।

ধর্মকর্মের প্রতি আবুল কালামের বাড়তি অনুরাগ নজরে পড়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষেরও। তারা পরিচ্ছন্নতা কাজে কিছুটা ছাড় দিলে কালাম আরো বেশী মনযোগী করে তোলেন ধর্মীয় কাজে।

কালাম সৌদি সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে মাত্র ৩০ রিয়ালে প্রবাসীদের ওমরাহ পালনের কাজে যুক্ত হন।

আবুল কালাম বলেন, জেদ্দা,তায়েফ,মদিনা,রিয়াদ,দাম্মামসহ গোটা সৌদিজুড়ে কাজ করছেন বহু বাংলাদেশী। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে এই বিষয়গুলো অবহিত করি প্রবাসীদের।

তারা জেদ্দায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হন। তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে আসি। এতে তাদের যেমন বিশাল সাশ্রয় হয়,তেমনি ছুটির দিনটিকে কাজে লাগিয়ে তারা ওমরাহ পালন করেন সহজেই। ওমরাহ পালন শেষে আবার আমরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিই। মক্কার পবিত্র মসজিদ আল হারামের কাছে ইফতারের পর দেখা যায় ৩০ জনের মতো প্রবাসীদের। যারা সদ্য ওমরাহ পালন শেষ করে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তাদের একজন কুমিল্লার বিল্লাল হোসেন জানান, এটা আমাদের জন্যে বড় সুযোগ। যেখানে আসা যাওয়ায় প্রায় ১'শ রিয়ালের বেশি খরচ হতো সেখানে মাত্র ৩০ রিয়ালে ওমরাহ পালনের সুযোগ নি:সন্দেহে চমৎকার উদ্যোগ।

সেবা আমির জবলে সউদান এলাকায় ‘ঢাকা হোটেল এন্ড বিরিয়ানী হাউজ’ নামের  রেষ্টুরেন্টের মালিক জসীম উদ্দিন চৌধুরী জানান, আবুল কালাম যাদের এখানে নিয়ে আসেন, আমরা তাদের তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহ করি। তাদের গ্রাহক নয়,মেহমান হিসেবে আমরা বাড়তি যত্ন করি।

আবুল কালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি প্রবাসী ভাইদের জন্যে যা করছি সেটার মাধ্যমে পরকালের জন্যে আমি নেকি কুড়াচ্ছি। পাশাপাশি তাদের নিয়ে এসে প্রায় প্রতিদিন আল্লার ঘর তাওয়াফ করি। সেটাও কম কিছু নয়। অনেকের মাত্র ৩০ রিয়াল ব্যয় করার সামর্থও থাকে না।

এর বাইরে প্রবাসী ভাইয়ের বুঝিয়ে দেই ওমরাহ পালনের বিষয়টি। েগাইড করি তাদের। অনেকেই জানেন না,কিভাবে এহরাম বাঁধতে হয়,কোথায় কোথায় দোয়া করলে তা আল্লাহ কবুল করেন।

এর মাধ্যমে তারা পরিশুদ্ধভাবে ওমরাহ পালন করেন। যার কারণে তারা পূণ্যতা অর্জন করেন। আলোকিত হয় তাদের জীবন। এতেই আমার শান্তি- যোগ করেন আবুল কালাম।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর