রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার নিয়ে অজস্র অভিযোগ আসছে বলে মন্তব্য করে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখানে গাড়িতে উঠতে গেলে চাঁদা, মাল নামাতে গেলে চাঁদা, আবার গাড়ি থেকেও ভাগ আছে। কারওয়ান বাজার বিরাট বড় চাঁদার আখড়া।’
‘তবে আমি কোনো চাঁদা নেই না, আমার সিটি কর্পোরেশনের কেউ যদি চাঁদা নেন, কোনো কাউন্সিলর যদি চাঁদা নেন, প্রমাণ পেলে আমি কোনো ছাড় দেব না,’ যোগ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়ে মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ও সগির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র বলেন, ‘ফুটপাত তো দখল হয়েছেই, এখন রাস্তার মধ্যে অবৈধ দখল চলে এসেছে। আমি রাস্তার মধ্যে কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা অ্যালাউ করব না। জনগণ চায় না রাস্তার মধ্যে, ফুটপাতের ওপর অবৈধ স্থাপনা থাকুক। কাজেই রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে কোনো বাণিজ্য করতে দেব না।’
‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বানানো রাস্তা, ফুটপাতে কাউকে অনৈতিক সুবিধা নিতে দেব না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ফার্মগেট থেকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ হয়ে রেলগেটের পাশ দিয়ে কারওয়ান বাজারের ভেতর দিয়ে বাইপাস সড়কটি উন্মুক্ত করা হবে। এ সড়ক ব্যবহার করে মানুষ ফার্মগেট থেকে পেট্রোবাংলা হয়ে এফডিসির পাশ দিয়ে হাতিরঝিল যেতে পারবে,’ বলেন মেয়র আতিক।
মেয়র বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে রাস্তা দখল করেছেন, তাদের অনুরোধ করব, সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিন। এখানে বিরাট বাণিজ্য চলছিল। রাস্তার ওপর অবৈধ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি চলবে না। ফুটপাত দখল করে কোনো বাণিজ্য হবে না। ফুটপাত এবং রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এ রাস্তা সম্পূর্ণরূপে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
এর আগে কারওয়ান বাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। অভিযানে তেজগাঁও থানার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড জাতীয় শ্রমিক লীগের অস্থায়ী কার্যালয়, কৃষক লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া রেললাইনের পাশের ফলের আড়ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে ভাঙার সময় ফলের আড়তদাররা বলছিলেন, ‘আমাদের আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। আজ সকালেই মালগুলো এনেছি, এভাবে সব নষ্ট করে দিল। আমাদের তরমুজ, কমলা, কদবেল, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় কোটি টাকার ফল ছিল।’
এছাড়া রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়। তবে বহাল তবিয়তে রয়েছে ডিএনসিসির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে সড়ক দখল করে ডিএনসিসির গাড়ি পাকিংয়ের শেড। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘অবশ্যই এটাও উচ্ছেদ করব। আমরা পর্যায়ক্রমে সব করব।’
উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়ে যায় এটা ঠেকাতে স্থানীয় কাউন্সিরকে সভাপতি করে একটি মনিটরিং টিম গঠনের কথা বললেন মেয়র। সেই কমিটিতে আরও থাকবে, বাজার কমিটির সভাপতি, স্থানীয় পুলিশ প্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ও সিটি কর্পোরেশনের একজন প্রতিনিধি। এই টিম দেখবে পুন:দখল হচ্ছে কিনা।
প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেছেন, কারওয়ান বাজারে আমাদের প্রায় ২৩ বিঘা জায়গা রয়েছে। তারমধ্যে ৩ থেকে ৪ বিঘা জায়গা অবৈধ দখলে। এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেছেন, যতবার দখল হবে ততবারই উচ্ছেদ হবে। আর এখানে আগে নোটিশ দেওয়ার বিষয় না। তারা অবৈধভাবে দখল করেছে, সেটাতো আমাদের জানিয়ে করেনি। কাজেই এই অযুহাত দেখালে চলবে না।