তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে সচেতনতা অপরিহার্য

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-29 06:33:56

তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে এর অভীষ্ট অর্জন নির্ভর করে সব অংশীদার নাগরিক, সরকার, তথ্য কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তাই জনগণের মাঝে এ আইন প্রয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। কী প্রক্রিয়ায় তথ্য চাইতে হয় সেজন্য সচেতনতা গড়ে তোলা অপরিহার্য।

পাশাপাশি আইনের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংগঠন এবং গণমাধ্যমকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস-২০১৯ উপলক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের এক দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা জানি যে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন আইনটি প্রণীত হয় তখন বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে আইনটির গুরুত্ব উচ্চারিত হয়েছে। আবার একই সাথে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের মধ্যে এ আইনের পরিপিন্থী অবস্থান নিতে এবং বক্তব্য দিতেও শোনা গেছে। এখন তারা যদি সহযোগী না হন, তারা যদি এ আইনের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্যোগ না নেন তাহলে এই আইনটি সতিকার অর্থে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যকার গোপনীয়তার সংস্কৃতির মানসিকতার পরিবর্তনের অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইনটি বাস্তবায়নের জন্য গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন কৌশল প্রণয়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আর সেই কৌশলপত্রের ওপর নির্ভর করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। তথ্য কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আরো পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হবে। সেখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এমন ব্যক্তিবর্গকে এ কমিশনের নিয়োগ দেওয়া উচিত যাতে তথ্য অধিকার সম্পর্কে নূন্যতম সচেতনতা আছে। আর তথ্য যে প্রকাশযোগ্য এই সংস্কৃতির ধারকবাহক যেন তারা হন সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের অসফলতা হলো তথ্য অধিকার আইনটা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ জানে না, যা দুঃখজনক। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে তথ্য অধিকার নিশ্চিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য অধিকার আইনের সুফল পেতে হলে তথ্য অধিকারকে আন্দোলনে পরিণত করার ওপর জোর দিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, তথ্য অধিকার আইনে বেসরকারি খাতে তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি এ আইনের একটি বড় দুর্বলতা। তার চেয়ে বড় দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা। কারণ দেশের কোনো মেগা দুর্নীতি হয় না রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর আফসান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। কারণ যাদের কাছে অভিযোগ দাখিল করবেন তারা নিজেরাই দুর্নীতিবাজ। এ জন্য জনমানুষ এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে ৭৫ শতাংশ মানুষের কোনো ধারণা নেই। ২৫ শতাংশ এ আইনের কথা শুনলেও এর মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ আইনটি কী তা জানেন না। মূলত ৫ শতাংশ মানুষের তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে ধারণা রয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ বিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে যেতে চান না। তারা মনে করেন পুলিশের কাছে গেলে ঝামেলা আরও বাড়বে। এ কারণে তারা আইনের আশ্রয় নিতে চান না, যোগ করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর