পদ্মার ১৫টি চরে পানিবন্দি ১৮০০ পরিবার

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-25 21:19:37

রাজশাহীর পদ্মায় ক্রমে বাড়ছে পানি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিপদসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে পদ্মার পানি। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে প্লাবিত হয়েছে পদ্মার বিভিন্ন চর। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে জেলার বাঘা উপজেলার ১৫টি চরের মানুষ।

চরের প্রায় ২০০ বাড়িঘর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার। গৃহহারা মানুষ এক সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি অবগত থাকলেও শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের কাছে কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে সেখানকার মানুষ।

শুক্রবার সরেজমিনে বাঘার দিয়াড়কাদিরপুর চরে গিয়ে দেখা যায়, চরে ২৩টি পরিবার বসবাস করে। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা পুরোপুরি পানিবন্দি। বাঘা উপজেলা সদরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ঘরের টিন খুলে তা দিয়ে ডিঙি নৌকা বানিয়ে নিয়েছেন তারা। তবে ওই নৌকায় এক জনের বেশি ওঠা যায় না।

চরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম, করিম মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাফিজুর রহমান জানান, তাদের আয়ের উৎস কৃষিকাজ। আগাম শাক-সবজি চাষ করেছিলেন তারা। অসময়ে পানি ওঠায় সব ভেসে গেছে। ঘরে খাবার কিছু নেই বললেই চলে। কিছু শুকনো খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। বিশুদ্ধ পানিরও প্রকট সংকট।

পদ্মার চরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ

পদ্মার চরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ

 

সাইজুদ্দিন নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘অল্প পানি ওঠার পর আমরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছিলাম। বাজার-সদাই করে তা দিয়ে চলছিল। তবে গত ৬/৭ দিন যেভাবে পানি বেড়েছে তাতে আর কিছুই করার উপায় নেই। আর দুই থেকে তিন দিন পানি বাড়লে ঘরে থাকার উপায়ও থাকবে না।’

চরের বাসিন্দা সাবিরুল ইসলামের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘ঘরে চাল-ডাল নেই। জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছিলাম কয়েক দিন। ওই টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে সংসার চালাচ্ছি। তবে এখন সেই পথও বন্ধ।’

দিয়াড়কাদিরপুর চরের মতো একই অবস্থা উপজেলার আরও ১৪টি চরে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বাঘার ১৫টি চরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ পরিবার বসবাস করে। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ডের মেম্বার জালাল উদ্দিন। তার বাড়িতেও পানি উঠেছে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৩৫ জন। চরের মধ্যে আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা এখনও পায়নি।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত চর

 

এদিকে, পূর্ব চকরাজাপুর চরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ফলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর পদ্মার ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে লক্ষ্মীনগর ও চরকালিদাসখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোনো সময় দু’টি স্কুল পদ্মায় বিলীন হতে পারে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ২০০ বাড়িঘর। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের জন্য কোনো সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়নি। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছি। তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন রেজা বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক চরের বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করছি। পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত মানুষের ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চাহিদার তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ এখনও আসেনি। বরাদ্দ পেলে আমরা দ্রুত মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেবো।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর