উদয়পুর গণমাধ্যম সম্মেলন, ভাঙল মিলনমেলা

বিবিধ, জাতীয়

রাজীব নন্দী, উদয়পুর (রাজস্থান), ভারত থেকে | 2023-08-31 14:14:03

ভারতের রাজস্থানের লেক সিটি খ্যাত উদয়পুরে গত দু'দিনের ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টির ছন্দে সাঙ্গ হলো ‘চতুর্থ অল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া কনফারেন্স-২০১৯'।

ভাঙল মিলনমেলা। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার বৈশ্বিক পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে নতুন ধারার সাংবাদিকতার ওপর দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে। এটি সর্ব ভারতীয় বৈশ্বিক গণমাধ্যম সম্মেলন হিসেবে খ্যাত। ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও সর্বভারতীয় জাতীয় পর্যায়ের লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরের গণমাধ্যম গবেষণা ও গণমাধ্যম নিয়ে চর্চার আহ্বান জানানো হয় এ সম্মেলন থেকে।

সকাল সাড়ে ১০টায় এমএল সুখদিয়া ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয় সমাপনী সেশন। দিনভর চলে সনদপত্র, বিতরণ বিদায়ী সম্ভাষণ ও ফটো সেশন। অভ্যাগতরা একে একে বিদায় নিতে শুরু করলে বিষাদের শূন্যতায় ছেয়ে যায় তিনদিন ধরে ব্যস্ততা থাকা এ মিলনায়তন। বাংলাদেশ ডেলিগেশনের মোট ৯টি প্রবন্ধ থেকে দুটি প্রবন্ধ বেস্ট পেপার এওয়ার্ড লাভ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব ড. শামীম রেজা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তাদের দুটি প্রবন্ধে এই বেস্ট পেপার এওয়ার্ড খ্যাতি পান।

অপরদিকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ইন্দো বাংলা চর্চা বিষয়ক গবেষক রাজীব নন্দী।

এই কনফারেন্সে বাংলাদেশ ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকাসহ একাধিক দেশ থেকে মোট ৬০০ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

বিদায়ী অধিবেশনের দিন কনফারেন্স চেয়ারম্যান শ্রী কল্যাণ সিং কোঠারি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এ কনফারেন্স আয়োজনের পেছনে সবার ত্যাগ ও সম্মান দেখে তিনি অভিভূত। ভবিষ্যতে ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গবেষক সম্মেলনের জন্য তিনি আবারও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাজস্থানে এ প্রোগ্রাম করতে পেরে তিনি গর্বিত।’

এতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণমাধ্যম, যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষকদের সমাগম ঘটেছে যা তিনি আশা করেছিলেন।

কনফারেন্সের কো-চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গের এডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. উজ্জ্বল কে চৌধুরী জানান, ভবিষ্যতে এ কনফারেন্সকে আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ অপরাপর জনগোষ্ঠিকে নিয়ে এ গণমাধ্যম আসর বসতে পারে কলকাতায়।

বাংলাদেশ ডেলিগেশনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, ভবিষ্যতে এ কনফারেন্স বাংলাদেশেও আয়োজন করা যেতে পারে। এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজন করতে গেলে যে ধরনের সাংগঠনিক দক্ষতা দরকার তা এ মুহুর্তে বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের গণমাধ্যম গবেষণা সম্মেলন আয়োজন হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো ব্যাপক কলোবরে আয়োজন করলে দক্ষিণ এশিয়া সহ পৃথিবীতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

অলইন্ডিয়া চতুর্থ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গবেষণা সম্মেলনের বিশেষ খবরগুলো নিয়মিত পরিবেশন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক আলমগীর হোসেনের বিশেষ তত্ত্বাবধানে সংবাদগুলো পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠান থেকে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বাংলাভাষী জনগণের কাছে এই তিন ধরে কনফারেন্সের খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

কনফারেন্সের শেষ দিন মধ্যহ্নভোজের পর মূলত অভ্যাগতরা মেতে ওঠেন বিদায়ী সম্ভাষণে। এ সময় দুই বাংলার গবেষকদের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল লক্ষ্যণীয়। তারা প্রত্যেকেই দুই বাংলার একটি সম্মিলিত যুথবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম প্রত্যাশা করছেন। তারা বলছেন- বাংলাদেশ ও ভারত সাংস্কৃতিকগত দিক থেকে এতোই নৈকটয় যে তারা চাইলেই গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্র ইত্যাদি নিয়ে একটি যুথবদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা কাজে যুক্ত হতে পারেন।

কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক স্নেহাশীষ সুর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে। বাংলাদেশে অনেক দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে যা আগে কল্পনা করা যায়নি।

সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্টের (এসএসিএমডি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ কামরুল হাসান এ কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের একজন গণমাধ্যম গবেষণার অন্যতম সাংগঠনিক ব্যক্তি। যিনি জোর দিচ্ছেন মূলত মিডিয়া লিটারেসির ওপর। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, ‘এ গবেষণা সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। গত বছরের তুলনায় এখানে অংশগ্রহণ বেড়েছে। যা দৃশ্যমান পরিবর্তন হলেও, মূলত বাংলাদেশে গণযোগাযোগ গবেষণা আরও বেশি প্রসারিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে এরকম সাংগঠনিক কনফারেন্স সাংগঠনিক যোগাযোগগুলো ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি বাংলাদেশে মিডিয়া লিটারেসি প্রোমিটংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক শিক্ষকদের আরো সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন।

কনফারেন্সের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ড. কুঞ্জন আচারিয়া বলেন, ‘এই কনফারেন্সটি ভারতের গণমাধ্যম গবেষণার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের গণমাধ্যম বিষয়ক সংকট ও সম্ভাবনাগুলো যেমন উঠে এসেছে, তেমনি সংকটগুলো পরিত্রাণের অনেকগুলো পথও উঠে এসেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর