পদ্মায় হু হু করে বাড়ছে পানি, ঝুঁকিতে রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধ

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 03:57:14

ফারাক্কার সবগুলো লকগেট খুলে দেয়ায় রাজশাহীর পদ্মায় হু-হু করে পানি বাড়ছে। উজানের ধেয়ে আসা পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহীর টি-বাঁধ। এরই মধ্যে কিছুটা দেবে গেছে বাঁধটি। বাঁধ রক্ষায় বুধবার (২ অক্টোবর) ভোর থেকে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, টি-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধ চরম হুমকির মুখে পড়বে। কারণ উজান থেকে ধেয়ে আসা প্রবল স্রোত রাজশাহী টি-বাঁধে এসে ধাক্কা খেয়ে শক্তি হারায়। ফলে টি-বাঁধ রক্ষায় বালুভার্তি ৫০০ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে পানির প্রবাহ কমতে শুরু না করলে টি-বাঁধ টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মিটার রিডার এনামুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১৮ দশমিক ১৭ মিটার। আর সকাল ৬টায় ছিল ১৮ দশমিক ১৪ মিটার। অর্থাৎ প্রতি দুই ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এভাবে থাকলে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোর নাগাদ বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবে পানির প্রবাহ। পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও ফারাক্কার সব লকগেট খুলে দেয়ার প্রভাব এখনো পুরোপুরি রাজশাহী পয়েন্টে পৌঁছানি। ফারাক্কার প্রভাব রাজশাহী পয়েন্টে পৌঁছালে পানির স্রোত কয়েকগুণ বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে রাজশাহীর টি-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর টি-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো শহররক্ষা বাঁধ ব্যাপক হুমকিতে পড়বে।’

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

তিনি বলেন, ‘টি-বাঁধটি কয়েকযুগ আগে করা। পানি বৃদ্ধি পেলে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়। তবে এবার স্রোতের তোড়ে বাঁধটি কিছুটা দেবে গেছে। বাঁধের ইটগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। বাঁধে যাতে স্রোতের ধাক্কা কম লাগে এজন্য বুধবার ভোর থেকে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। দু’দিনের মধ্যে পানির প্রবাহ না কমলে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী, পবা এলাকার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঘার ১৫টি চরের পানিবন্দী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। গত তিন দিনে সেখানে প্রায় ২৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

চারঘাটে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ভাঙনের ‍সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি স্কুল, মসজিদ যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেখানে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার।

গোদাগাড়ীতে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গৃহপালিত পশু নিয়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। তবে গোদাগাড়ীতে এখনো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেনি উপজেলা প্রশাসন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দী মানুষদের সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারকে আমরা ২০ কেজি চাল ও শুকনা খাবারের প্যাকেট দিচ্ছি।’ পানিবন্দী অসহায় মানুষদের পাশে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে পাশে দাঁড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর