অভিযোগের ৮ ভাগ আমলে নিতে পারে দুদক

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-23 21:31:08

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ নম্বরে বা লিখিতভাবে আসা অভিযোগের মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ অভিযোগ আমলে নিতে পারে দুদক। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা অভিযোগের পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) এক সভায় পরিসংখ্যান তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “বিগত কয়েক বছরের কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনে মোট অভিযোগ এসেছে ১৫,৪৯৭টি (অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ এর ফোনকল বাদে), এরমধ্যে মাত্র ১,১৯৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট অভিযোগের মাত্র ৮ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯২ শতাংশ অভিযোগই নথিভুক্ত অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালে কমিশনে ১৬,৬০৬টি অভিযোগ আসে, এরমধ্যে ১,২৬৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ এ বছরও প্রায় ৮ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়, অবশিষ্ট ৯২ শতাংশ অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে।

২০১৭ সালে কমিশনে মোট অভিযোগ আসে ১৭,৯৫৩টি, এর মধ্যে ৯৩৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন অর্থাৎ ৫ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়, অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ অভিযোগই হয় নথিভুক্ত করা হয় অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে পাঠানো হয়। একইভাবে ২০১৬ সালে কমিশনে মোট অভিযোগ আসে ১২,৯৯০টি। এরমধ্যে ১,০০৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন, এ বছরও মাত্র ৮ শতাংশ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়।”

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আইনি বাধ্যবাধকতা তথা কমিশনের কার্যপরিধি বা অভিযোগসমূহ কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত না হওয়ার কারণে গড়ে প্রায় ৯৩ শতাংশ অভিযোগই কমিশন অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করতে পারছে না। যাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি এই বিপুলসংখ্যক অভিযোগকারী হয়তো মনে করছেন, তারা কমিশনে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবেই তারা হতাশ হবেন এবং কমিশন সম্পর্কে তাদের আস্থা হ্রাসও পেতে পারে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা সৃষ্ট এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার পক্ষে কমিশন আইনের তফসিল বহির্ভূত কোনো অভিযোগের ওপর কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। তবে, কমিশন যেসব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করছে না, এগুলো মূলত কমিশন আইনের তফসিলবহির্ভূত অভিযোগ যেমন-ব্যক্তিগত রেষারেষি, বেসরকারি ব্যক্তিদের ভূমি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তি পর্যায়ের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত, পারিবারিক বিরোধ যেমন যৌতুক-নারী নির্যাতন, অতি তুচ্ছ ঘটনা, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মানুষকে হয়রানি করার জন্য অভিযোগ ইত্যাদি।”

যেসব অভিযোগ আমলে নেওয়ার এখতিয়ার আছে দুদকের:
১। সরকারি কর্মচারী/সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো যেকোনো ব্যক্তির অবৈধভাবে নিজ নামে/বে-নামে সম্পদ অর্জন।
২। সরকারি কর্তব্য পালনের সময় সরকারি কর্মচারী/ব্যাংকার/সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক উৎকোচ (ঘুষ)/উপঢৌকন গ্রহণ।
৩। সরকারি অর্থ/সম্পত্তি আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন।
৪। সরকারি কর্মচারী উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যবসা/বাণিজ্য পরিচালনা।
৫। সরকারিকর্মচারী কর্তৃক জ্ঞাতসারে কোনো অপরাধীকে শাস্তি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা।
৬। কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনকল্পে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ।
৭। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের মানিলন্ডারিং।
৮। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী/ব্যাংকার কর্তৃক জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণা ইত্যাদি।

বর্তমানে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াদি বিবেচনায় নেওয়া হয়:
১। অভিযোগটি কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধ কিনা।
২। অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও তথ্যভিত্তিক কিনা।
৩। অপরাধ সংঘটনের সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে কিনা।
৪। অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্টতা।
৫। অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ আছে কিনা।
৬। অভিযোগের গুরুত্ব ও মাত্রা।
৭। অভিযোগে আর্থিক সংশ্লেষের পরিমাণ।
৮। অভিযোগকারীর নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ আছে কিনা।
৯। অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইন পর্যালোচনা করে দেখা হয় যাতে অভিযোগটি আদালতে প্রমাণযোগ্য কিনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর