দুর্গাপূজা শুরু: মর্ত্যলোকে পদার্পণ দশভূজা দেবী দুর্গার

বিবিধ, জাতীয়

নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 19:34:31

শরৎ এলেই স্থান ভেদে দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হয়। বাঁশ-খড় থেকে শুরু করে কালো ও সাদা এঁটেল মাটি সংগ্রহ করে পালেরা যখন মূর্তি বানানোর কাজে হাত দেয়, তখন থেকেই শুরু হয় প্রতীক্ষার প্রহর। এর পরে মাটি লাগিয়ে মূর্তি শুকানো, তাতে রঙের প্রলেপের পর শাড়ি ও গহনা পড়ানো, একই সঙ্গে মণ্ডপ সাজানো পর্যন্ত এই উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে।

অপেক্ষা শুরু হয় দশভূজা দেবী দুর্গা কবে শ্বশুর বাড়ি কৈলাস থেকে বাবার বাড়ি মর্ত্যের উদ্দেশে বের হবেন। ১৫দিন পিতৃপক্ষের গণনা শেষে আসে কন্যা বা দেবী পক্ষের দিন। প্রত্যেকবার আলাদা আলাদা বাহনে করে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসেন মা দুর্গা। এবার দুর্গা দেবী মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে।

দেবীর যাত্রার দিনে অর্থাৎ মহালয়ায় তর্পণের মাধ্যমে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাদের উদ্দেশে তিল ও জল সহযোগে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। এরপর দুর্গতনাশিনী দেবী দুর্গার মর্ত্যে পা দেওয়ার অপেক্ষা।

মহালয়ার দিন রওনা করে পাঁচদিন সময় লাগিয়ে মর্ত্যে আসেন মা দুর্গা। মাঝখানের এই দিনগুলোতে নানা ধর্মীয় আচার ও রীতি পালনের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবীকে বরণ করতে শুরু করে পূজার প্রস্তুতি।

মহাপঞ্চমীতে প্রতিমা শিল্পীরা সকল কাজ শেষ করে প্রতিমা বসান মণ্ডপে। কাঠির বাড়ি পড়ে ঢাকে। চির চেনা সেই ঢাকের আওয়াজে উদ্বেলিত হয় মন। মূলত এটি দুর্গাপূজার প্রথম দিন। এই দিনটি থেকেই শারদ উৎসবের শুরু। পঞ্চমীর দিনে বাড়ির ক্ষুদে সদস্যটির গায়ে নতুন জামা পরানো শুরু হয়। শেষ করা হয় বোধন পর্বের।

পঞ্জিকার সূচি অনুযায়ী, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে শুরু হবে ষষ্ঠীর লগ্ন। লগ্ন স্থায়ী হবে শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ এবং দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শেষে মাতৃরূপে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঠাঁই করে নেবেন বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসা মা দুর্গা। ষষ্ঠীর সকালে ষষ্ঠীর ঘট, চণ্ডীর ঘট বসবে এবং অনুষ্ঠিত হবে পূজা। সন্ধ্যায় হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আর এই ষষ্ঠীর পূজার মধ্য দিয়েই দুর্গা দেবীর মর্ত্যে আগমন ঘটবে।

মহাঅষ্ঠমীর দিন, বেশিরভাগ বাড়িতেই নিরামিষ রান্না করা হয়। এই দিনটিকে পূজার দিনগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ দিন বলে মনে করা হয়। অষ্টমীতে দশভূজা দেবী তার দুই রূপে পূজা নেন। কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা হয় অষ্টমীতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন সন্ধিপূজায় মা স্বয়ং আসেন মূর্তির মধ্যে। সেই সময় মা কে সাক্ষী রেখে তাঁর সামনে আঁখ, কলা, চালকুমড়া বলি দেওয়া হয়। এই বছর অষ্টমীর দিন পড়েছে আগামী ৬ অক্টোবর। পূজা-অর্চনা শেষে মায়ের ভক্তরা দূর দুরান্তের প্রতিমা দর্শন ও প্রসাদ নেন এদিনে।

বছর জুড়ে অপেক্ষা করলেও দুর্গা মা যে আসেন অল্প সময়ের জন্যই। তাই তাকে বরণ ও আরাধ্যে যে সময় ব্যয় করা হয় তার তুলনায় খুব অল্প সময়ই তিনি মর্ত্যে থাকেন। তাই, অষ্টমী শেষে মহানবমীর দিনেই বাজে বিদায়ের সুর।

নবমীর দিনই দুর্গাপূজার শেষ দিন। পূজার শেষ দিন হিসেবে সবাই আনন্দে মেতে উঠলেও মনের কোথাও যেন একটা মনখারাপ থেকেই যায়। ঢাক, কার শব্দ ও ধুপ-ধুনোর গন্ধটা ভেদ করে মনে কোনে বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। কারণ, পরের দিনই মা দশভুজা দেবীকে বিদায় জানিয়ে দিতে হবে। তবে বিদায় লগ্নে মহানবমীর দিনে মা দুর্গার উদ্দেশে একটি বিশেষ আরতি রাখা হয়। যেখানে সনাতমধর্মী নানা বয়সের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ বিশেষ কায়দায় নৃত্য পরিবেশন করে দুর্গা দেবীকে খুশি করার চেষ্টা করেন। আরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় মহানবমী।

বিজয়া দশমী, দুর্গতিনাশিনী দেবীর বিদায়ের পালা। দেবী তাঁর বাপের বাড়ি থেকে আবার শ্বশুর বাড়ি কৈলাস ের উদ্দেশে রওনা দেন। মাকে হাসি মুখে বিদায় দিতে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে হিন্দু ধর্মাম্বলীরা। পূজার মণ্ডপ নির্দিষ্ট কয়েকাবার চক্রাকারে ঘুরে বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয় দুর্গা দেবীকে। তার আগে মা দুর্গাকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। ভাসানোর পরেই এক বছরের জন্য শুরু হয় দুর্গতিনাশিনী, দশভূজা দেবীর অপেক্ষার প্রহর।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে ২৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর