ডিঙি নিয়ে পানিবন্দিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন মতলেব

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 08:28:39

অসময়ে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ১৫টি চরের বাসিন্দারা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে, বন্যার কারণে পানিবন্দি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। তবে সেখানে পানিবন্দি মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অসহায় এসব মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মতলেব হোসেন। প্রতিদিন নিয়ম করে টিনের তৈরি ডিঙি নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে ওষুধপত্র দিচ্ছেন। শুধু ঔষধের প্রকৃত মূল্য ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকা নেননা তিনি। তার এমন কাজের প্রশংসা স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে। আর চরবাসীর চোখে মতলেব যেন ‘শান্তির দূত’।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বাঘার পদ্মার চরগুলোতে বসবাস করে ৩ হাজার ৭৬২টি পরিবার। সেখানে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। তাদের গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। এসব বাড়ির মধ্যে প্রায় সব বাড়িতে পানি উঠেছে। কেউ কেউ নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষই উঁচু মাচা তৈরি করে বসবাস করছেন।

পানিবন্দি মানুষ স্বাভাবিকভাবে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আশেপাশে তাদের চিকিৎসা সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশ্ববর্তী একটি বাজারে চিকিৎসকরা চেম্বার করে বসলেও গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানেও পানি উঠায় চেম্বার বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। ফলে চরবাসীর ভরসা এখন পল্লী চিকিৎসক মতলেব।

পল্লী চিকিৎসক মতলেব বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষদের দেখলে খুবই খারাপ লাগে। ওদের মধ্যে অনেকে আমার পরিচিত। এসব মানুষ বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করবে বিষয়টি ভাবলে কষ্ট হয়। টিনের ডিঙিতে করে ওদের বাড়ি বাড়ি যেতে আমার কষ্ট হয় বটে, তবে ওদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে নিজের মনে প্রশান্তি ফেরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট একটা সময়ে নিয়মিত পানিবন্দি মানুষের বাড়ি বাড়ি ভিজিট করছি। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে কেউ মোবাইলে কল করলে যেকেনো সময় তাদের বাড়িতে যাচ্ছি। কোনো ভিজিট বা ওষুধে এখন লাভ করছি না। শুধু যে দামে কিনছি সেই দামে দিচ্ছি। পানি না নামা পর্যন্ত আমি ওদের সেবা করার চেষ্টা করব।’

আতারপাড়া চরের ৭৫ বছর বয়সী আকছেদ ব্যাপারি বলেন, ‘মতলেব ডাক্তারের রাত-দিন নেই। আমরা যখন তাকে ডাকি, তখনি পাই। চরবাসীর কাছে মতলেব ডাক্তার দেবতার মতো। সবাই তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। ’

নবিরুন্নেসা নামে আরেক বৃদ্ধা বলেন, ‘চরের মধ্যে কোনো ডাক্তার এসে ওষুধ দিয়ে যাবে, এটা আমরা কল্পনাও করতাম না। কিন্তু প্রতিবছর পানি উঠলেই মতলেব আমাদের ঘরে ঘরে আসে। ওষুধ দেয়, পরামর্শ দেয়। খুব ভালো মানুষ।’

চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ‘মতলেব দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা দেন। বন্যার সময় তার অবদান চরবাসী ভুলতে পারবে না। চরের মানুষ অসুস্থ হলে প্রাথমিক পর্যায়ে তার কাছে চিকিৎসা নেই। জটিল হলে তার পরামর্শে শহরে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা সে খুব ভালো করে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর