রাবিতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

ঢাকা, জাতীয়

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 04:25:51

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে খালি পায়ে পদযাত্রা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। পদযাত্রা থেকে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে খালি পায়ে যাত্রা করে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে আসেন। সেখানে তারা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘দেশ যখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটছে, ঠিক তখন শহীদ শামসুজ্জোহার ক্যাম্পাস নানাভাবে রোগাক্রান্ত, ভারাক্রান্ত এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। উপাচার্য প্রকাশ্যে সিনেট ভবনে সার্বভৌমত্বকে অবমাননা করে ‘জয় হিন্দ’ বলে স্লোগান দেন। শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য নিয়ে উপ-উপাচার্য ও আইন বিভাগের সভাপতি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।’

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা যাচাইয়ে ইউজিসি এবং দুদক অনুসন্ধানের দাবি জানান তিনি।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘জয় হিন্দ বলার জন্য উপাচার্যকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সহ-উপাচার্যকে অপসারণ করতে হবে। ইউজিসি যেন এসব দুর্নীতির অনুসন্ধান করে আসল বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরে।’

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে শেষে উপাচার্যে দেয়া বক্তব্যের শেষে ‘জয় হিন্দ’ বলে স্লোগান দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ এ প্ল্যাটফর্মটি।

এদিকে, উপাচার্যের ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান ও উপ-উপাচার্যের ফোনালাপ ফাঁসকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রশাসকদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল শিক্ষকরা। শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ দাবি জানান। এতে ৫৮ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার দুটি ‘দুষ্কর্ম’ গণমাধ্যম, সুশিল সমাজের সদস্যদের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। উপাচার্য তার দুর্নীতি ও অপকর্মকে আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে ২৬ সেপ্টেম্বর উপাচার্য সিনেট ভবনে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা পর ‘জয় হিন্দ’ বলে বক্তব্য শেষ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা মনে করি ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহায়তা দানকারী প্রতিবেশী ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক স্লোগান ‘জয় হিন্দ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উচ্চারণ করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রসত্ত্বার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এদিকে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে স্পষ্ট উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো.জাকারিয়ার নিয়োগ বাণিজ্যে নিমজ্জিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনর যে জনরব চালু আছে এই ফোনালাপ তারই সত্যতা প্রমাণ করেছে। উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার এ ধরনের বিবেকহীন কর্মকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান একটি সেমিনারে ‘জয় হিন্দ স্লোগান দের। সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। এরই মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হয়। যেখানে তিনি সাদিয়া নামে এক মেয়ের কাছে কত টাকা দিতে রেডি তা জানতে চান। এরপর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর