রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন: ক্ষোভের ভোট, নাকি লাঙ্গলের ভোট?

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-25 21:37:13

এরশাদশূন্য রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ভোট শুরু হলেও ভোটারদের মধ্যে নেই তেমন উৎসাহ।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছয় প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের প্রার্থী না থাকায় এক ধরনের হতাশা, অভিমান ও ক্ষোভ রয়েছে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। এ কারণে ভোট উৎসব যেন অনেকটাই নিরুত্তাপ।

এরশাদময় দীর্ঘ ২৮ বছরের ইতিহাসে রংপুরে এবারই প্রথম আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয় অসন্তোষ।

এদিকে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে শুরুর দিকে নাটকীয়তা ও রংপুর জাতীয় পার্টির বিভাজন দেখা যায়। বিএনপিতে স্থানীয় প্রার্থী না পাওয়ার হতাশা আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রত্যাহারে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদকে সমর্থন দিয়ে প্রচারণার শেষ দিনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে এক মঞ্চে উঠেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

তবে সাদ এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি মনোনয়ন বঞ্চিত এস এম ইয়াসিরকে। বরং রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির বড় একটি অংশ সাদ এরশাদের বিপক্ষে। তাদের কেউ গোপনে, আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের পক্ষে কাজ করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের সব নেতা এরশাদপুত্রের পাশে থাকলেও শুধু ছিলেন না প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়া অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। এনিয়েও সাধারণ ভোটারসহ সচেতন মহলে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এ তিন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের হতাশা আর ক্ষোভকে পুঁজি করে ভোটের হিসেব বদলে দিতে চায় সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আসিফ। এরশাদ পরিবারের অভিমানী এ প্রার্থীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা নেই। তারপরও সাধারণ ভোটারদের আলোচনায় রয়েছে তার প্রতীক মোটরগাড়ি-কার।

জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটাররা যদি মনে জমানো ক্ষোভ ও অভিমান ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে প্রকাশ করেন, তাহলে অন্যদের মান অভিমান আর ক্ষোভকে পুঁজি করে ফুরফুরে মেজাজে থাকাটা স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহরিয়ার আসিফের পক্ষেই সম্ভব।

তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক নজরুল ইসলাম কালু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে ভিন্ন কথা বলছেন। তার দাবি, এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদই শেষ পর্যন্ত তার বাবার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের লাঙ্গলের প্রতি ভালোবাসার ভোটে জিতবেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সাদ এরশাদ অপরিচিত ও স্থানীয় না হলেও তিনি এরশাদপুত্র, এটা তার বড় পরিচয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে সাদের প্রতি সমর্থন করায় লাঙ্গলের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এটি ক্ষোভের ভোট। আর সাধারণ ভোটার এবং তিন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যদি ভোটের মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়েন, তাহলে এরশাদবিহীন রংপুরে প্রথম অঘটন ঘটবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এক লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর