সবজির দামে পাইকারি আর খুচরায় বিস্তর ফারাক

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 00:46:30

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাইকারি থেকে খুচরায় সবজির দামে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের পার্থক্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্রেতারা। সঠিকভাবে বাজার তদারকির অভাবে বাজারের এমন দশা বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার সরেজমিন ঘুরে শীতের সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে বিশাল ফারাক দেখা গেছে।

পাইকারি ও খুচরা বাজার দুটি ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়, সিম ৮০ টাকা, ফুলকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস, বাঁধাকপি ১০ থেকে ১৪ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, সিম ১২০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা ও বাঁধাকপি ৪০ টাকায়।

এছাড়াও পাইকারি বাজারে মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাক, পেঁপে ১৫ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, ঢেরস ৩০ টাকা, কচু ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা, কচুরলতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৩০ টাক, শশা ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, পেঁপে ৩০, টমেটো ১২০, ঢেরস ৬০, কচু ৭০, কাঁচা মরিচ ৮০, কচুরলতি ৭০ ও শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ১৬ থেকে ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘৫০ টাকার নিচে আমরা কোনো সবজি কিনতে পারছি না। যার কারণে খুচরা বাজারে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শীতের সবজির দাম খুবই বেশি। শীতের সকল সবজির বাজারে এসে গেলেই দাম হয়তো কিছুটা কমে যেতে পারে।’

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে আসা রায়হান আলি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার ঘুরে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যখন খুচরা পর্যায়ে আসে, তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগমছাড়া হয়ে যায়। অসাধু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করে।

এদিকে, মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, পাকিস্তানি মুরগি ২৩০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়, দেশি মুরগি ৩৯০ টাকায়। এদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, পাকিস্তানি মুরগি ২৬০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২২০ টাকায়, দেশি মুরগি ৪৫০ টাকায়। তাছাড়া গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াসিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে পাইকারি বাজারে মুরগির দাম একটু বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে দামে খুব একটা তফাৎ নেই। সীমিত লাভেই দুই বাজারেই মুরগি বিক্রি হচ্ছে।’

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ২০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০ টাকা, সরপুটি মাছ ১৫০ টাকা,তেলাপিয়া মাছ ১২০ টাকা, পাবদা মাছ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, চিংড়ি মাছ ৭০০ টাকায়, সরপুটি ২০০ টাকায়, পাবদা ৬০০ টাকায় ও তেলাপিয়া ১৬০ টাকায়।

কাওরান বাজারের মুদি দোকানদার বাসার এন্টারপ্রাইজ মালিক মো.বাসার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘চাল-ডাল-তেল-লবণ, আটা-ময়দার দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারের স্বাভাবিক আছে, খুব একটা বাড়েনি। তবে পাইকারি বাজারে চিনির দাম খানিকটা বেড়েছে। তার প্রভাব খুচরা বাজারে এখনও পড়েনি।’

কারওয়ান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ। কথা হলো তার সাথে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘শীতকালীন সবজিসহ সকল পণ্যের দামই অসহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের পার্থক্যের কারণে আমাদের মত ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি মনে করি সঠিকভাবে বাজার তদারকির অভাবে বাজারে এমন দুরবস্থা।’

পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী কামাল শেখ বার্তা টোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে পণ্য পরিবহনেই একটি বৃহৎ অংশ খরচ হয়ে যায়। তাই খুচরা বাজারে দামটা বেড়ে যায়। এখানে সিন্ডিকেটের কোনো বিষয় নেই। সব সময় সীমিত লাভ করার চেষ্টা করি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর