ডিরেক্টরি থেকে টার্গেট নির্ধারণ, ফাঁদে ফেলে লাখ টাকায় আপোষ

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-26 17:58:10

রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে ৭ বছর আগে বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসের ফোন ডিরেক্টরি কেনে কাজী ওমর ফারুক (৫১) ও মো. আনিছুর রহমান ওরফে বাবুল মিয়া (৩৫)। সেখান থেকেই নাম্বার টার্গেট করে নিজেদের দুদক কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করা হতো। এরপর ভিকটিম আপোষ করতে চাইলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত এই দুই প্রতারক।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকায় এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠে এই দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ডিবির শুটিং ইনভেস্টিগেশন টিম। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহায়তা ডিবির শুটিং ইনভেস্টিগেশন টিম কামরাঙ্গীচরের ঝাউলাহাটির খন্দকার গলির একটি বাসা থেকে ওমর ফারুক ও মো. আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০টি মোবাইল ফোন, ২৪টি সিম কার্ড ও ১১টি টেলিফোন নির্দেশিকা ও ফোন ডিরেক্টরি উদ্ধার করা হয়।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ওমর ফারুক ও মো. আনিছুর রহমানের বাড়ি মাদারীপুরে। তারা পূর্ব পরিচিত হওয়া রাজধানীর কামরাঙ্গীচরের ঝাউলাহাটির খন্দকার গলিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। গত সাত বছর আগে তারা নীলক্ষেত ঢাকার কয়েকটি সরকারি অফিসের ফোন ডিরেক্টরি ক্রয় করেন। প্রথমে ডিরেক্টরি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট পদের কর্মকর্তাদের টার্গেট করা হতো। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বা মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ১০-২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিত। পরে বড় বড় কর্মকর্তাকে টার্গেট করে লাখ টাকা আদায় করা হতো।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে এই দুই প্রতারক ৪৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে ডিবির শুটিং ইনভেস্টিগেশন টিম গত এক মাসে তাদের একটি বিকাশ নাম্বার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, দেশের সকল সরকারি অফিসের ফোন ডিরেক্টরি তাদের কাছে আছে।

টার্গেট ব্যক্তিদের ফোন দিতেন মো. আনিছুর রহমান। তিনি ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বলতেন, ‘আমার স্যার (ওমর ফারুক) দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বা সিরাজুল ইসলাম বা মো. হাবিবুর রহমান ইফতেখার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’

তখন কথিত দুদক কর্মকর্তা ওমর ফারুক ফোনে নাম ধরে বলতেন, ‘আপনার নামে একটি অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করার জন্য আমাদের নিকট পাঠানো হয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত করে কিছু ভুলত্রুটি পাওয়া গেছে। আপনি এখন তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।’

এই কথা বলে ফারুক ফোনটি মো. আনিছুর রহমানের হাতে দিয়ে দিত। তখন মো. আনিছুর রহমান ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তিকে বলতেন, ‘তদন্ত করে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’

টার্গেট ব্যক্তি মামলা না করে আপোষ করার প্রস্তাব দিলে তারা একটি বিকাশ নাম্বারে দিয়ে লাখ টাকা পাঠাতে বলত। এভাবেই তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিবির শুটিং ইনভেস্টিগেশন টিম ইনচার্জ সহকারী পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্লাহ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘তারা দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে এভাবে প্রতারণা করত। তারা চারটি বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে প্রতারণার টাকা নিত। তাদের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর