কবি হাফিজকে ভালোবাসেন বিশ্বের সব মানুষ

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-26 12:59:39

‘পারস্যের বিশ্ববিশ্রুত কবি হাফিজ শিরাজির মতো পাণ্ডিত্যপূর্ণ মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মানুষ। বিশ্বের সব মানুষ কবি হাফিজকে ভালোবাসেন।’

ফার্সি কবি হাফিজ স্মরণে সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ রেজা নাফার।

তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছে- কোন পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া একে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। হাফিজ ছিলেন তেমন একজন পবিত্র ব্যক্তি।

রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ রেজা নাফার আরও বলেন, ইরান ও বাংলাদেশ- দুই দেশের মানুষ পাশাপাশি বসে কবি হাফিজের বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন; এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।

বাংলার ব্যাপারে হাফিজের বিশেষ ভালোবাসা ছিল। বাংলাদেশের অনেক মানুষের সাথে ফার্সির সম্পর্ক রয়েছে, তারা হৃদয়ে ফার্সিকে সংরক্ষণ করেন, যোগ করেন রেজা নাফার।

তিনি আরও বলেন, আমরা গর্ববোধ করি আরো একটি কারণে যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ হাজার ছাত্রছাত্রী ফার্সি ভাষায় শিক্ষালাভ করছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাযেম কাহদুয়ী বলেন, হাফিজ, সাদী, রুমির মতো মহাকবিরা বাংলাদেশে স্থান করে নিয়েছেন। আমরা সরাসরি তাদের কবিতার রস আস্বাদন করতে পারি। হাফিজ ছিলেন এমন একজন কবি যার কবিতার বই ইরানের প্রায় প্রতিটি ঘরে পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি রাখা হয়। হাফিজ ১৪টি রেওয়ায়াত থেকে কোরআনকে আত্মস্থ করেছিলেন।

‘হাফিজ তার কবিতায় বার বার কোরআনকে ব্যবহার করেছেন। যে গুপ্তধন তিনি ব্যবহার করেছেন তা হলো- রাত বা ভোরের সময়ে দোয়া করা। এজন্য হাফিজকে জানতে কোরআন, হাদিস ও ইরানের পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ওমর খৈয়মের কবিতার সাথে হাফিজের কবিতার মিল পাওয়া যায়। ফেরদৌসি সম্পর্কেও তিনি অনেক কিছু বলেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক আজাদ রহমান বলেন, হাফিজের জন্ম ১৩১৫ সালে। আর তিনি ইন্তেকাল করেন ১৩৯০ সালে। অর্থাৎ প্রায় ৭০০ বছর ধরে তার রচনা আমাদের মধ্যে রয়েছে। তিনি অসাধারণ গজল রচনা করেছেন। সাদীর হাত ধরে গজল এসেছে। আর হাফিজ প্রচুর মিষ্টি গজল রচনা করেছেন। গজল সংগীতে মধ্যপ্রাচ্য ও ইরানের ব্যাপক প্রভাব ছিল। কিন্তু বর্তমানে গজলের রেওয়াজ কম হচ্ছে।

আজাদ রহমান আরও বলেন, কেবল বাংলা বা উপমহাদেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য হাফিজের প্রয়োজন। তিনি প্রেমের বাণী শুনিয়েছেন। প্রেমই স্নেহ, প্রেমই মমতা, প্রেমই মানবতা। মহান আল্লাহ ভালোবাসার কারণে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ পশুতে পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানে গজলশিল্পীদের সঙ্গে সুরের মূর্ছনায় মঞ্চ মাতান বিশিষ্ট বংশীবাদক আরিফুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি সাহিত্য ও সংগীত অনুরাগীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর