যুবলীগে বয়সসীমা, সিদ্ধান্ত দেবেন শেখ হাসিনা

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:01:12

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস আগামী ২৩ নভেম্বর। অর্ধযুগ পরে সংগঠনটির কংগ্রেসের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। আর কংগ্রেসের আগে সংগঠনটির ভেতরে-বাইরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীদের বয়সসীমা।

যুবলীগের দায়িত্বে ‘তথাকথিত’ যুবকরাই থাকবেন নাকি প্রকৃত যুবকরা দলের নেতৃত্বে আসবেন সেটা নিয়েই আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। যুবলীগের পদপ্রত্যাশী তরুণদের দাবি, প্রকৃত যুবকদের হাতে যুবলীগের নেতৃত্ব তুলে দিয়ে দেশের যুবসমাজকে সংগঠিত করে বর্তমান সরকারের চলার পথকে মসৃণ করতে হবে।

অন্যদিকে যুবলীগের বর্তমান অনেক নেতা দাবি করেছেন, যুবলীগের মতো বৃহৎ সংগঠন এবং এর বিশাল কর্মীবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ বছরে বয়সসীমা বেধে দিলে বর্তমান কমিটির ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় নেতা বাদ পড়ে যাবেন। অথচ রাজপথে তাদের অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

যুবলীগের বয়সসীমা নিয়ে চারদিকে যখন নানা আলোচনা তখন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ জানিয়েছেন, বয়সসীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে যুবলীগের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। বয়সসীমা নির্ধারণ নিয়ে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা এখনও এটা নিয়ে ভাবিনি। আমাদের অভিভাবক, আমাদের পৃষ্ঠপোষক, আমাদের নেত্রী রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা। যুবলীগের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা নিয়ে কোন কথা নেই। বয়সসীমা নির্ধারণ একটি মৌলিক বিষয়। এই মৌলিক বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনার। তিনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গঠনতন্ত্রে আগে থেকে আছে এমন কোন বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা যায় সংগঠনের দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু মৌলিক কোন বিষয় সংযোজন করতে হলে অবশ্যই নেত্রী যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে।

যুবলীগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে- এমন ‘সিদ্ধান্ত’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। আমাদের কোন ফোরামে এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি।

যুবক কারা- সেটি নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেন হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, কে যুবক, কে যুবক নয় সেটা নির্ধারণ করা কিন্তু সহজ বিষয় নয়। আগে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৩৭ বছর। সেই ৩৭ বছরে তার যুবকত্ব কতুটুকু থাকতো সেটা বোঝাই যায়। এখন আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ থেকে ৭৪ বছর। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে যুবক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

‘এখন মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কত বছর বয়স পর্যন্ত একজন ব্যক্তি যুবক থাকবে সেটা নির্ধারণ করাটা কিন্তু সহজ বিষয় নয়।'

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, অভিজ্ঞতাও একটা বিষয় আছে। যুবলীগের মতো একটা বড় সংগঠন যাদের বিপুল কর্মীবাহিনী পরিচালনা করতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ত্যাগী ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে।

সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যুবলীগের নেতাদের অপকর্মের খবর দেশের মানুষের মুখে মুখে। অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্যে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা সংগঠনকে করেছে বিতর্কিত। আসন্ন কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে যুবলীগের যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে সেটি কাটিয়ে ওঠা কতটুকু সম্ভব?

জবাবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অবশ্যই সম্ভব। এক সময় যেখানে সাগর ছিল, সেখানে কি শহর হয় না? আবার যেখানে শহর ছিল সেখানে সাগর হয় না? হয়েছে। যুবলীগের কিছু ব্যক্তির অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না। আসলে নেগেটিভ কোন কিছু আগে থেকে জানা যায় না। আপনারা সাংবাদিকরাও কিন্তু নেগেটিভ কোন কিছু আগে লেখেন না। লেখেন ঘটনা হওয়ার পরে। টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনাও কিন্তু আমেরিকা আগে জানতে পারেনি। পেরেছে হামলা হওয়ার পরে। তেমনি যুবলীগের কিছু লোকের অপকর্ম ঠেকাতে আমাদের সাবধানতার ঘাটতি ছিল। সেটি আমরা আগে চিহ্নিত করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। সেই ঘাটতি আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা আশা করি আগামী নেতৃত্ব এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যুবলীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান আসলে যুবলীগের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

যুবলীগের আগামী জাতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রদবদলের সম্ভাবনা কতুটুকু জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই রাজপথে পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতা। অনেকেই বেশ কয়েকটা কংগ্রেস পার করে বর্তমান নেতৃত্বে এসেছে। যুবলীগের নেতারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই আগামী কংগ্রেসে যদি বয়সের কোন বাধা নিষেধ না থাকে তাহলে কমিটিতে ব্যাপক রদবদলের সম্ভাবনা কম। তবে আমরা সবসময় তরুণদের আগমন চাই সংগঠনে। তাই যারা সাবেক ছাত্রনেতা, রাজপথের পরীক্ষিত ও ত্যাগী কর্মী তারা এই কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন।

আসন্ন কংগ্রেস নিয়ে যুবলীগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ বলেন, আমাদের অনেক বড় সংগঠন, আছে বিশাল কর্মীবাহিনী। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেসের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এই তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যুবলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের একটি মানসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যে প্রস্তুতিটুকু নেওয়া বাকি আছে সেটা আগামী ২০ অক্টোবর নেত্রীর সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করে তারপর চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি বলেন, আশা করি নেত্রীর নির্দেশনা মতো স্মরণকালের সবচেয়ে বড়, জাঁকজমকপূর্ণ সফল কংগ্রেস আমরা দেশবাসীকে উপহার দিতে পারব।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ দেশের প্রথম যুব সংগঠন যা ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব অঙ্গসংগঠন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। ২০১২ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান পদে ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সাত বছর পর সংগঠনটির সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ নভেম্বর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর