'যুবলীগের বয়স্করা জেলায় যাও, সেখানে রাজনীতিবিদ দরকার'

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-23 09:24:43

নানা জল্পনা কল্পনা শেষে অবশেষে যুবলীগের বয়সসীমা ৫৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় যুবলীগের বর্তমান কমিটির ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ নেতাই যুবলীগে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সংগঠনটির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্যই ষাটোর্ধ্ব বয়সের।

তবে বয়সসীমা নিয়ে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে দেখলেও অনেকেই হঠাৎ করে যেন বিপাকে পড়ে গেছেন। বয়সসীমা নির্ধারণ হওয়ায় সংগঠনে নতুন করে মেরুকরণ হবে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। 

রোববার (২০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে বয়সসীমা নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বৈঠকে যুবলীগের নেতাদের বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হলে সেখানে উপস্থিত যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান ও ফারুক হোসেন বয়সসীমা নির্ধারণকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বয়স আরো বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তারা দুজনেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ নানা যুক্তি দিয়ে বয়সসীমা ৫৫ থেকে বাড়ানোর কথা বলেন।

এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুবলীগের বয়স যুবকের বয়স হতে হবে। নেত্রী সব দিক বিবেচনা করেই বয়সের কথা বলেছেন।

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, 'সারাজীবন যুবলীগ করতে চাও? সব কিছুর একটা বয়স থাকা উচিত। যুবলীগের নেতা হতে হলে ৫৫ বছর বয়সের উপরে হওয়া উচিত না। যারা যারা বুড়ো হয়ে গেছো তারা জেলায় যাও। জেলায়ও রাজনীতিবিদ দরকার আছে।'

শেখ হাসিনার এই মনোভাবের পর বয়সসীমা নিয়ে আর কোনো কথা বলেননি কেউ।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বরে ৩২ বছর বয়সে তারুণ্যনির্ভর যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি। তখন যুবলীগের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে সংগঠনের সদস্য হওয়ার বেলায় বয়সের বাধ্যবাধকতা ছিল। ওই সময়ে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী যুবক এবং যুবার যুবলীগের সদস্য হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এরপর দীর্ঘ সময় ওই বয়সসীমা অনুসরণ করা হয়নি। যার ফলে বেশি বয়সের নেতারাই যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ কংগ্রেসে অনুমোদিত সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যে কোনো যুবক ও যুবার যুবলীগের সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এই সুযোগেই যে কোনো বয়সের ব্যক্তিরা যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই যুবকদের সংগঠন যুবলীগ মূলত বুড়োদের সংগঠনে রূপ নিয়েছিল।

অবশেষে ৭ বছর পর সপ্তম কংগ্রেসে এসে যুবলীগের বয়সের সীমারেখা টেনে দিলেন সংগঠনের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এই বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা অনুসরণ করলে সংগঠনটির অনেক হেভিওয়েট ক্যান্ডিডেটই বাদ পড়ে যাবেন। কেননা যুবলীগের ৩৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই ৬০ বছর পেরিয়ে গেছেন। কারো কারো বয়স ৭০-এর বেশি।

৬০ বছর বয়সের বেশি থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্যরা হলেন ড. মীজানুর রহমান, শেখ শামসুল আবেদীন, চয়ন ইসলাম, ড. আহমদ আল কবির, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, জাহাঙ্গীর কবির রানা, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, প্রকৌশলী নিখিল গুহ ও সৈয়দ মাহামুদুল হক। সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের বয়স ৬০-এর ওপরে। সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ ও আমির হোসেন গাজীর বয়স ৬০-এর কোঠায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর