দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মায় ফের জেগেছে চর

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-26 03:25:21

দুই সপ্তাহ আগেও উত্তাল ছিল রাজশাহীর পদ্মা। বিপদসীমার কাছাকাছি ছিল পানির প্রবাহ। দুই কূল ছাপিয়ে উঠেছিল পানি। প্রবল স্রোতে দেবে গিয়েছিল টি-বাঁধ। ঝুঁকির মুখে পড়ে রাজশাহীর শহর রক্ষা বাঁধ। ১৫ দিনের ব্যবধানে পানি কমে সেই উত্তাল পদ্মার বুক চিরে ফের জেগে উঠছে চর। হারিয়ে গেছে পদ্মার উত্তাল ঢেউ। জেগে ওঠা চরগুলো এখন জানান দিচ্ছে- ‘কারও যৌবনই চিরস্থায়ী নয়’!

সপ্তাহ দু’য়েক আগে পদ্মার পানি বৃদ্ধি দেখে পুলকিত ভ্রমণ পিপাসুদেরও যেন রুচি বদলেছে! ক’দিন আগেও ঘুরে ঘুরে যৌবনা পদ্মা দেখা মানুষ এখন দলবেঁধে ঘুরতে শুরু করেছে জেগে ওঠা চরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই নৌকায় চরে ঘুরতে রওয়ানা হচ্ছে তারা। চরে পৌঁছে তাদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস।

টাঙ্গাইল থেকে রাজশাহীতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন নাসরিন আক্তার ও কামাল হোসেন দম্পতি। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে তারা পদ্মার চরে ঘুরতে যান। নাসরিন ও কামাল দম্পতি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, গত মাসের (সেপ্টেম্বর) শেষ দিকেও তারা রাজশাহীতে এসেছিলেন। তখন সীমান্ত অবকাশ, লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, টি-বাঁধ, আই-বাঁধ, তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকায় ঘুরে ঘুরে উত্তাল পদ্মার পানি দেখেছিলেন।

পানি কমে রাজশাহীর পদ্মার বুক চিরে জেগে উঠেছে চর

কামাল হোসেন বলেন, ‘পদ্মায় পানি বৃদ্ধি এবং শুকিয়ে চর জেগে ওঠা দু’টো আমাকে খুব টানে। এক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে দুই রুপে পদ্মা দেখেছি। বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে দলবেঁধে ঘুরতে আসতাম। হই-হুল্লোড় করে ছুটির দিনগুলো এখানে কাটিয়ে দিতাম। পদ্মার চরে বেড়াতে আসলে এখনও সেই স্মৃতি রোমান্থন করি।’

নগরীর কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম তার নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে পদ্মার চরে ঘুরতে এসেছেন। তিনি জানালেন, ‘ক’দিন আগেও পানির তোড়ে ভীতি সৃষ্টি করছিল পদ্মা। তবে এখন ঢেউ নেই। নৌকায় চড়তে ভয়ও কেটে গেছে। মেয়ে বললো- বাবা, চলো চরে ঘুরে আসি। ব্যাস- চলে এলাম। বেশ ভালো লাগছে। নির্মল পরিবেশ, স্নিগ্ধ হাওয়া মন ভরিয়ে দিচ্ছে।’

তবে নদীর বুকে অল্পদিনের ব্যবধানে এমন চর জেগে ওঠায় হতাশ জেলে ও মাঝিরা। কারণ পানি কমে যাওয়ায় মাছও কম উঠছে জালে। তাছাড়া পানি দেখতে নৌকা ভ্রমণ করতে আসা মানুষও কমতে থাকায় আয় কমেছে মাঝিদের।

দু’সপ্তাহ আগেও পদ্মার দু’কূল ছাপিয়ে উঠেছিল পানি

কেশবপুর ঘাটে রাজু নামের নৌকা মাঝি বলেন, ‘পদ্মায় পানি বেশি থাকলে বেশি লোকজন হয়। আর চর জাগলে নদী খুব ছোট হয়ে আসে। তখন নৌকা চলে না। ফলে আয়-রোজগারেও ভাটা পড়ে। নদীতে পানি কমে গেলে জেলেদের জীবিকার ওপরেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে।’

ইবরাহীম আলী নামের এক জেলে বলেন, ‘মাছ বিক্রি করে আমার সংসার চলে। পদ্মায় যখন পানি বেশি থাকে, তখন অনেক মাছ পাওয়া যায়।। কিন্তু পানি যত কমছে মাছও তত কমছে। ফলে তার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মিটার গেজ রিডার এনামুল হক জানান, পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে এবার সর্বোচ্চ পানির প্রবাহ ছিল ১৮ দশমিক ১৯ মিটার। গত ৬ অক্টোবর ভোর থেকে পানি কমতে শুরু করে। সবশেষ বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানির প্রবাহর ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ মিটার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মার আরও ৪ মিটার পানি নামতে পারে। সেক্ষেত্রে ৯ থেকে ১০ মিটার পানি থাকতে পারে। শীতের শুরুতে পদ্মায় বালুচর দেখা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর