গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আবার প্রচার শুরু

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-30 20:06:45

গাজীপুর: মাইকে সম্বোধন প্রিয় এলাকাবাসী! দূর থেকে ভেসে আসছে বাজনার তালে তালে ভোট চাওয়ার সুর। ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে লিফলেট, ব্যাজ ও ভোটার স্লিপ। রাস্তায় বিনম্র সালাম, দোয়া প্রার্থনা। অলিগলিতে ঝুঁলছে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে এসব আয়োজন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আমেজ না কাটতেই সোমবার (১৮ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে লম্বা বিরতির পর নির্বাচনী প্রচারের মধ্যদিয়ে সরব হয়ে উঠছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা।

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিনে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। দিনভর পথসভা, বৈঠক ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সকাল হতেই শুরু হয়েছে প্রার্থীদের সমর্থনে মাইকিং।

গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় প্রায় এক মাস ১২ দিন পর সোমবার থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রার্থীরা পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের কাছে থাকার চেষ্টা করেছেন।

গাজীপুর সিটি এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন গাজীপুরে এসে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং এখানকার বিভিন্ন মিল কারখানায় চাকরি করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন এ সিটি কর্পোরেশনের ভোটার।

সরকারি ছুটি শেষ হলেও সব মিল-কারখানা এখনও পুরোদমে চালু হয়নি। ফলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। এমতাবস্থায় অনেকটা ফাঁকা, নির্জীব ও খালি মাঠে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। যেন ঘুমিয়ে থাকা ভোটারদের চলছে জাগ্রত করার প্রাণান্তর চেষ্টা।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনী প্রচারণা ও জনসংযোগে জোরেসোরে নেমে পড়েছেন। নির্বাচনে সমান পাল্লা দিয়ে অন্য প্রার্থীরাও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানী শেষে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত নতুন তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা সোমবার থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন।

উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), ইসলামী ঐক্য জোটের মাওলানা ফজলুর রহমান মুন্সী (মিনার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫টি আর ভোটকক্ষ ২ হাজার ৭৬১টি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।

এ সম্পর্কিত আরও খবর