জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে প্রায় ২৪ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-22 08:56:22

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর যেন অনিয়মের আখড়া। সরকারি এই দফতরে প্রায় ২৪ কোটি টাকার অডিট আপত্তি উঠেছে। কোনো কোনো প্রকল্পে অতিরিক্ত মালামাল ক্রয় আবার কোনো প্রকল্পের মালামাল ক্রয় করে খোলা আকাশের নিচে রাখায় সরকারি টাকার অপচয় হয়েছে। এসব টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে জোড় দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সংসদ ভবনে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০ অর্থ বছরের অন্তর্ভুক্ত ১৫টি অডিট আপত্তির উপর আলোচনা হয়। তাতে দেখা গেছে ১৫টি প্রকল্পে মোট ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭০ টাকার অডিট আপত্তি উঠেছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়নও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এর একটি অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে কোডাল বিধি ও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ১০ কোটি ২০ লাখ ৭১ হাজার ২৮৪ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা সরকারের আর্থিক ক্ষতি। একটি প্রকল্পের পরিচালক অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে মালামাল ক্রয় এবং তা খোলা আকাশের নিচে ভান্ডারজাত করার ফলে অব্যবহৃত ২ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকার মালামালের অপচয় দেখানো হয়েছে।

এদিকে এডিপি ও দরপত্রের শর্ত উপেক্ষা করে টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াই ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মালামালের মাধ্যমে নলকূপ স্থাপন করায় অনিয়মিত ব্যয় ২ কোটি ৬৬ লাখ ১৮ হাজার ৮০৮ টাকা। এছাড়া সংগৃহীত সহায়ক চাঁদার ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া বাজেট বরাদ্দ বহির্ভূত দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদান করায় সরকারের ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৩ টাকা অনিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ব্যয়, নলকূপের সহায়ক চাঁদা ও যন্ত্রাংশের বিক্রয়লব্ধ অর্থ আত্মসাৎ, ভি এস মালামাল ঘাটতি ও ঘূর্ণায়মান তহবিল আত্মসাতের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের নিকট হতে সরকারি পাওনা আদায় না করায় সরকারের ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬৭ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

অডিট আপত্তিতে দেখা গেছে ঠিকাদারের মাধ্যমে স্থাপনকৃত নলকূপ হতে উত্তোলিত পানিতে নির্ধারিত মাত্রার বেশি আর্সেনিক পাওয়া সত্বেও বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেখানে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯০টাকা। ব্যবহারযোগ্য টিউবওয়েল সামগ্রী দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় সরকারের ২৩ লাখ ২০ হাজার ৭৪৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্র টেম্পারিং করে দরপত্র মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যাদেশ প্রদানে ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৯১ হাজার ২৪ টাকা। অন্য একটি প্রকল্পে জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্র টেম্পারিং করে কার্যাদেশ দেওয়ায় ক্ষতি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৭ টাকা। আত্মসাৎকৃত অর্থ অনাদায় জনিত কারণে ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বিভাগীয় রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা না করে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। উচ্চমূল্যে হ্যান্ড পাম্প ক্রয় করায় সরকারের ১০ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের জন্য ১৮ লাখ টাকা ক্ষতি। পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র বিজ্ঞপ্তি সিপিটিইউ ওয়েবসাইটে প্রকাশ ব্যতিরেকে অনিয়মিতভাবে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ১২৮ টাকা ব্যয় করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বৈঠকে ৫টি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত হয়, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে মন্ত্রণালয়, অডিট অধিদফতরও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে রিপোর্ট পেশ এবং আদায়যোগ্য অর্থ দ্রুততম সময়ে আদায়ের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করে কমিটিকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত প্রদান করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।  

কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী’র সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও ওয়াসিকা আয়েশা খান উক্ত অংশগ্রহণ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর