পরকীয়ার জেরে ১২ টুকরো করে হত্যা, পিবিআই’র চার্জশিট

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা | 2023-09-01 09:01:22

খুলনা মহানগরীতে হাবিবুর রহমান সবুজ নামের এক যুবককে ১২ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরকীয়ার জের ধরে সবুজকে ১২ টুকরো করে হত্যা করেন অভিযুক্ত এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন ও তার সহযোগিরা।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক শেখ আবু বকর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফ, অনুপম, খলিলুর রহমান, গাজী আবদুল হালিম ও একেএম মোস্তফা চৌধুরী মামুন। আসামিদের মধ্যে মোস্তফা মামুন পলাতক রয়েছেন। অন্য ৪ আসামি গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন। মামলার চার্জশিটে মোট ৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

নিহত হাবিবুর রহমান সবুজ সাতক্ষীরা সদরের উমরা এলাকার আবদুল হামিদ সরদারের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার একটি ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ৭ মার্চ সকালে নগরীর শের-এ বাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের মরদেহের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে ফারাজীপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দুটি ব্যাগে থাকা মাথা ও দুই হাতসহ অন্য অংশগুলো উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গত ৯ মার্চ খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ র্যাব-৬ খুলনার ফুলবাড়িগেট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর ৩৪ ফারাজীপাড়া লেনের হাসনাত মঞ্জিলে তল্লাশি চালানো হয়। প্রায় তিন মাস ধরে এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন আসাদুজ্জামান।

র্যাব জানায়, আসাদুজ্জামানের ঘরের খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো নিহত হাবিবুরের কাটা পা ও বাথরুমে বালতির ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো মরদেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও দা উদ্ধার করে র্যাব। নিহত হাবিবুরের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আসাদুজ্জামানের ঘরে পাওয়া যায়। র্যাবের আরেকটি টিম বটিয়াঘাটা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যুবক অনুপম মহলদারকে আটক করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত খুলনা থানা থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

পিবিআই জানায়, তারা গত এপ্রিল মাসে হত্যাকাণ্ডে জড়িত খলিলুর রহমান ও গাজী আবদুল হালিমকে আটক করে।

সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহত হাবিবুর ও পলাতক আসামি এ কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন পৃথক মামলায় কারাগারে ছিলেন। কারাগারে তাদের পরিচয় হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে হাবিবুর কারাগার থেকে জামিনে বের হন। হাবিবুর জেল থেকে বের হওয়ার সময় মোস্তফা তাকে কারামুক্ত করতে সহযোগিতার অনুরোধ জানান এবং তার স্ত্রী রিক্তার মোবাইল নম্বর দেন। কিন্তু হাবিবুর কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনকি মোস্তফার স্ত্রী রিক্তার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। হাবিবুর রিক্তাকে নিয়ে কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এছাড়া মোস্তফার বোনের সঙ্গেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন হাবিবুর।

মোস্তফা কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে হাবিবুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার অনুরোধে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আরও ৪ জন হাবিবুরকে হত্যায় অংশ নেন। ওই চার জনের সঙ্গে মোস্তফার পরিচয় কারাগারে থাকাকালীন। গত ৬ মার্চ রাতে ফারাজীপাড়া এলাকায় আসাদের বাসায় হাবিবুরকে ডেকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো মিষ্টি খাওয়ানো হয়। হাবিবুর অচেতন হয়ে পড়লে পাঁচজন মিলে তাকে হত্যা করেন এবং এরপর তার মরদেহ ১২ টুকরো করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শেখ আবু বকর বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হাবিবুরের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মূল আসামি মোস্তফা মামুন এখনও পলাতক রয়েছেন। তিনি ভারতে চলে গেছেন বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর